Search

উটের দুধের গুণাগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • 0
  • 2 views

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিলাসিতার আরেক নাম উটের দুধ! গরুর দুধের তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি দামে এ খাদ্য কিনতে হয়। এক লিটার উটের দুধের দাম পড়ে গড়ে ৩০ ডলার। বাংলাদেশী টাকায় তা প্রায় ২ হাজার ৫৫০ টাকা। দুধ, পনির ও টকদই উৎপাদনে উটের ব্যবহার বহু প্রাচীন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উট গৃহপালিত প্রাণী। তারপরও উটের দুধের দাম এতো বেশি কেন? এর প্রধান কারণ চাহিদা আর যোগানের বিস্তর পার্থক্য।

উটের দুধ গরুর দুধের মতো বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় না হলেও বিশ্বব্যাপী এ দুধের চাহিদা ইদানীং বাড়ছে। কিন্তু উটের বাণিজ্যিক দুগ্ধ খামার এতোটাই কম যে এ সামান্য চাহিদাও পূরণ করা যাচ্ছে না।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর গরুর দুধ উৎপাদিত হয় ৬০ কোটি টন। অন্যদিকে উটের দুধ উৎপাদিত হয় বছরে মাত্র ৩০ লাখ টন। এর ৬৪ শতাংশই আসে সোমালিয়া ও কেনিয়া থেকে। উটের দুধ আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সর্ববৃহৎ খামারটি রয়েছে দুবাইয়ে। এখানকার ক্যামেলিসিয়াস ডেইরি ফার্মে প্রায় ৬ হাজার উট রয়েছে। এ খামার থকে প্রতি বছর ৪০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।

ক্যামেলিসিয়াসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুতাসের আল বাদরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ যাতায়াত ও খাবারের জন্য উটের ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রধান খাবার উটের দুধ ও খেজুর। দিন দিন উটের দুধের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মূলত এ কারণেই উটের দুধের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনকি স্বাস্থ্য সচেতনতা। উটের দুধকে গুনে মানে গরুর দুধের চেয়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। গরুর দুধের তুলনায় এই দুধে চর্বির মাত্রা প্রায় অর্ধেক। আর ভিটামিন সি ১০ গুণ। পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণও বেশি। এজন্য অনেকেই উটের দুধকে ওষুধের বিকল্প হিসেবে নিয়েছেন। এই দুধ স্বদে কিছুটা নোনতা, তবে খেতে ভালোই। কেননা দুধে ক্রিমিভাব রয়েছে এবং সহজে হজম হয়।

বিশ্বব্যাপী উটের দুগ্ধ খামারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গরুর খামারের সংখ্যার ধারে কাছেও এখনো পৌঁছায়নি। ইউরোপে প্রতিটি উটের বিপরীতে আছে প্রায় ১ হাজার ২০০টি গরু। তাছাড়া উট বেশি থাকলেও এর থেকে দুধ সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ।

ক্যামেলিসিয়াস ডেইরি ফার্মের কর্মী যুদিদ যুহাজ বলেন, তারা দিনে দুইবার দোহন করেন। ৬ হাজার উটের মধ্যে ১ হাজার ৩০০টি থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। এ কাজে নিযুক্ত আছে কয়েকশ কর্মী। দুধ সংগ্রহের জন্য তারা উটগুলোকে প্রশিক্ষণ দেন, যেন সহজে বেশি পরিমাণে দুধ সংগ্রহ করা যায়। কিছু উট অল্পদিনেই খামারের দুধ সংগ্রহ ব্যবস্থাটি বুঝে যায়। আবার কিছু কিছু কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়।

তবে একটি উট যে পরিমাণ দুধ দেয় গরুর তুলনায় নগণ্য। মুতাসের বলেন, একটি গরু দিনে ৫০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। সেখানে একটি উট দেয় মাত্র ৬ থেকে ৭ লিটার। যুহাজ আরো বলেন, উটের দুধের দাম বেশি, কেননা উটের খাবারের দাম অনেক বেশি।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউটর ‘ডেজার্ট ফার্মস’ উটের দুধ বিক্রি করে। ক্যালিফোর্নিয়ার ৪০টিরও বেশি বিপণীবিতানে তারা উটের দুধ সরবরাহ করে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উটের বাথান থেকে তারা এ দুধ সংগ্রহ করে। যুক্তরাষ্ট্রে উটের দুধ বিক্রি তেমন চোখে পড়ে না। এর কারণ হলো ২০০৯ সালে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন উটের দুধ নিষিদ্ধ করেছিল। এ দেশে এক বোতল উটের দুধের দাম পড়ে কমপক্ষে ১৮ ডলার।

পানি সাশ্রয়: গরুর এক লিটার দুধ উৎপাদিত হতে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে, উটের দেহে তার থেকে ৯ গুণ কম পানি প্রয়োজন হয়।
সহজ পাচ্য: ল্যাকটোজ যাদের সমস্যা করে, উটের দুধে ল্যাকটোজ থাকলেও তাদের জন্য এটি তুলনামূলক ভালো।

ভিটামিন সমৃদ্ধ: অন্যান্য দুধের থেকে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে এতে। আর আছে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন সি। এ ছাড়া এতে অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

ইনসুলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে: উটের দুধ অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই পুষ্টিবিদেরা মধুমেহ, অর্থাৎ ডায়াবেটিসের রোগীদের উটের দুধ পান করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আয়রন বেশি থাকে: গরুর দুধের চেয়ে ছয় গুণ বেশি আয়রন থাকে উটের দুধে। শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে চিকিৎসকেরা উটের দুধ পানের ওপর গুরুত্ব দেন।

রূপচর্চায় ব্যবহার করা যায়: যাঁরা রূপলাবণ্য সচেতন, তাঁদের জন্যও এ এক আদর্শ পানীয়। পশ্চিমের দেশগুলোতে রূপচর্চায় উটের দুধের ব্যবহার বাড়ছে।

এসব ছাড়া, বিশেষ করে হৃদ্যন্ত্র চালু রাখার জন্য আরও বহু পুষ্টি উপাদান রয়েছে উটের দুধে।বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য ও পানির অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। ইউরোপেও উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুষ্টিগুণ, চাহিদা এবং জলবায়ু বিবেচনায় পশ্চিমের দেশগুলোর খামারিরা উটের দুধ উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন, গড়ে তুলছেন উটের বাণিজ্যিক দুগ্ধ খামার। তবে বিশ্বের বড় খামারটি আছে দুবাইয়ে।

এখানে ক্যামেলিসিয়াস ডেইরি ফার্মে আছে প্রায় ৬ হাজার উট। এই মেগা খামারে প্রতিবছর ৪০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। ভিটামিন, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম ও আমিষের উৎস দুধ মানুষের খুব পছন্দের খাবার। স্বাদে, ঘ্রাণে ও পুষ্টিগুণে দুধের বিকল্প খাবার খুব কমই আছে।

 

থাইরয়েড কী, লক্ষণ ও করণীয়
Prev Post থাইরয়েড কী, লক্ষণ ও করণীয়
তালের পায়েস বানানো রেসিপি
Next Post তালের পায়েস বানানো রেসিপি

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *