Search

কিডনি সুস্থ রাখতে কি খাবেন আর কি খাবেন না?

  • 0
  • 3 views

মানবদেহে কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু রক্ত পরিশোধনেই সাহায্য করে না, এর পাশাপাশি শরীরে তরল ও বিভিন্ন প্রকার লবণের ভারসাম্য, রক্ত উৎপাদনে সহায়তা এবং শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা কিডনির স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য কিডনি সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের ওপর আমাদের নজর রাখা এবং সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিডনি বিভিন্ন কারণে সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্র্র্রাইটিস, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, প্রস্রাবের নালিতে বাধার কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। এ ছাড়াও জন্মগত ত্রুটি এবং বংশগত কারণেও কিছু কিডনি রোগ হয়ে থাকে। অনেক কিডনি রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। অনেক কিডনি রোগ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা এর অগ্রসরতা ধীর করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়েটে কিছু খাবার যোগ করা কিডনিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে এবং কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা কিডনির কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো কমায়ই, সেই সঙ্গে কিডনি ফাংশনের এত মাত্রায় উন্নতি ঘটায় যে রোগভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

কিডনি সুস্থ রাখার খাবার কি কি?

যেসব খাবার কিডনি ফাংশন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে সেগুলো হলো-

পানি :
শরীরের সার্বিক সুরক্ষায় পানি অপরিহার্য উপাদান। এটি শরীরের যেকোনো প্রত্যঙ্গের জন্যই উপকারী। পানি ছাড়া কিডনির কার্যক্রম চলা কঠিন। কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে অন্তত তিন লিটার পানি প্রয়োজন হয়।

দারুচিনি :
রক্তে শর্করার মাত্রা যাতে কোনোভাবে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। সেই সঙ্গে কিডনি ফাংশনারেও উন্নতি ঘটায়।

ক্যানবেরি :
চেরির মতো এই ফলটিতেও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ‘সি’ ও ম্যাগনেশিয়াম। আর যেমনটা ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন যে এই দুটি উপাদান কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অলিভ অয়েল :
অলিভ অয়েলে রয়েছে অলিক অ্যাসিড, যা কিডনির কর্মক্ষমতায় বেশ কার্যকর। অলিভ অয়েলে রয়েছে মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা অক্সিডেশনের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। তা ছাড়া ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় অলিভ অয়েল।

রসুন ও পেঁয়াজ :
রসুনে রয়েছে স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান ও মিনারেল, যেমন সোডিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। কিডনি রোগীদের জন্য রসুন খুবই উপকারী। রসুনের মতো পেঁয়াজও কিডনি-বান্ধব। পেঁয়াজে রয়েছে বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ। এতে আরও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিডনি পরিষ্কার করে। কাঁচা বা রান্না করে পেঁয়াজ খেলে কিডনির স্বাস্থ্যের পক্ষে তা উপকারী।

চর্বিযুক্ত মাছ :
স্যামন, টুনা জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে। ভারতীয় ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ওমেগা থ্রি চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রক্তে চর্বির মাত্রা এবং রক্তচাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ। প্রাকৃতিক উপায় উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় খুঁজে পাওয়া কিডনিকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

চেরি :
এই ফলটিতে উপস্থিত ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, ফলেট, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাগনেশিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর কিডনি ফাংশানের মারাত্মক উন্নতি ঘটায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে শুরু করে। আর যত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে, তত আর্থ্রাটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

বাদাম :
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে কিডনি স্টোনের আশঙ্কা কমানোর পাশাপাশি শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই বাদামজাতীয় খাবার। বিশেষত কিডনি বিনস বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডিমের সাদা অংশ :
ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস এবং অ্যামিনো এসিড আছে যা কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে কিডনিকে সুস্থ রাখে। ডিম সিদ্ধ করে বা অমলেট করে খেতে পারেন। তবে হ্যাঁ, ডিমের সাদা অংশ শুধু।

ক্যাপসিকাম:
বিদেশী সবজি হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে ক্যাপসিকাম একটি জনপ্রিয় সবজি হিসাবে খাওয়া হচ্ছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম এবং ক্যালরির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৪৬.২। লাল রঙের ক্যাপসিকামে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন সি, বি৬, এ, ফলিক এসিড ও ফাইবার। লাল ক্যাপসিকামে লাইকোপিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা কয়েক রকমের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।

লেবুর শরবত:
লেবুর শরবতে থাকা ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড অভ্যন্তরীণ পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিডনির সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে এতে। এজন্য সকালে বা দুপুরে খাওয়ার আগে লেবুর শরবত পান করা যেতে পারে।

লাল আঙ্গুর:
লাল আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক পলিফেলনিক যৌগ, যা রেসভেরাট্রল নামে পরিচিত। এটি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ এবং কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা। রেসভেরাট্রল মূত্রাশয়জনিত ক্ষত উন্নয়ন করতে সহায়তা করে। তাই কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাল আঙ্গুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।

কিডনির সুস্থতায় যা খাওয়া উচিত নয়

প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। খাদ্য কিডনির সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমরা হয়তো সেসব খাবার সম্পর্কে জানি না। কিডনির জন্য ক্ষতিকর কিছু খাবার নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন:

বাদাম :
বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু সবসময় নয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার জন্য বাদামের ভূমিকা রয়েছে। বাদামে এক ধরনের খনিজ থাকে, যা অক্সালেট নামে পরিচিত। এটি কিডনির ক্ষতি করে থাকে। যদি আগে কারো পাথর হয়ে থাকে, তবে বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। বাদামের পাশাপাশি অক্সালেটযুক্ত আরো খাবার যেমন আলুর চিপস, ফেঞ্চ ফ্রাইস এগুলোও খাওয়া উচিত হবে না।

কফি :
আমরা অনেকেই প্রতিদিনের সকালটা এক কাপ কফি দিয়ে শুরু করি। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাফেইন পানে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সোডা এবং এনার্জি ড্রিংকও ক্ষতিকর। ক্যাফেইন হালকা ডায়াবেটিস অর্থাৎ মূত্রবর্ধক, যা কিডনির পানি শোষণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কিডনি যাতে ভালোভাবে কাজ করে, সেজন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। ক্যাফেইন রক্তপ্রবাহকে উদ্দীপিত করে রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এটা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

প্রোসেসড ফুড:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোসেসড ফুড যেমন হিমায়িত খাবার এবং মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। অতিরিক্ত চর্বি, চিনি বা সোডিয়ামে ভরা এসব খাবার কিডনির ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট। প্রসেসড ফুড এড়িয়ে তাই তাজা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। দোকানের খাবারের বদলে বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে হবে।

মেয়োনিজ:
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়োনিজ ব্যবহার করা হয়। সালাদ, স্যান্ডুইচ, বার্গারে ব্যবহার করা হয় এটি। এটি কিডনির জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়। এক টেবিল চামচ মেয়োনিজে থাকে ১০৩ ক্যালোরি। এ ধরনের খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে সবচেয়ে বেশি। যদি খেতেই হয়, তবে ফ্যাট ছাড়া এবং কম ক্যালোরির মেয়োনিজ খান। এতে সোডিয়াম ও চিনির পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

আলুর ডিপ ফ্রাই:
আলুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা আলুর চিপস এ ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দিন। কিডনি ও হার্ট ভালো রাখতে ডুবো তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আলুতে পটাশিয়াম থাকে অনেক বেশি, যা কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত মাংস:
প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন বেকন, সসেজ, হট ডগ এবং বার্গার প্যাটিস ইত্যাদি কিডনির বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিছু গবেষণায় বলা হয় যে, বেশি পরিমাণ প্রাণীর প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনি রোগের আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ:
অতিরিক্ত লবণ বা উচ্চ সোডিয়াম জাতীয় খাবার রক্তচাপ বাড়ায়, এটি কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণ হতে পারে। রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ খাওয়া অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

কোমল পানীয়:
কোমল পানীয়তে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সেইসঙ্গে এতে থাকে না কোনো পুষ্টিগুণও। এটি খাবারের অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে, যে কারণে বেড়ে যায় ওজন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয় পান করলে তা অস্টিওপোরোসিস (হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া), কিডনি রোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম এবং দাঁতের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৪০ বছর বয়স পেরোনোর পর কোনো সমস্যা না থাকলেও সবারই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি এবং প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করানো উচিত (প্রস্রাবে প্রোটিন এবং সুগারের উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য)। এ ছাড়া কিডনির কর্মক্ষমতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ৩২ শতাংশ জানেনই না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আবার জানা থাকার পরও অর্ধেক মানুষেরই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। শেষ পর্যন্ত মোট রোগীর মাত্র ২৫ শতাংশ পারছেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে। একই ধরনের কথা ডায়াবেটিসের জন্যও প্রযোজ্য। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগগুলো থাকার কারণে রোগীর কিডনি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে নীরবে।

ভারতের জীবনধারা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ক্রনিক কিডনি ডিজিজে (সিকেডি) আক্রান্ত এবং প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেন কিডনি-বান্ধব খাবার খেতে, যাতে কিডনি ভালোভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
Prev Post উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গু
Next Post মাথাচাড়া দিচ্ছে ডেঙ্গু

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *