Search

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় করণীয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক

  • 0
  • 2 views

লাইফস্টাইল ডেস্ক : 

পৃথিবীজুড়ে কোন রোগের ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জানেন? গ্যাস্ট্রিক। আমরা সবাই কমবেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগি। অনিয়মিত জীবনযাপন, শরীরের প্রকৃতি বা ঋতু না বুঝে খাওয়াদাওয়া, ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না থাকা, মানসিক চাপে ভোগা, নানা কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরে ক্ষতিকারক বায়ু তৈরি হয়, পরে যা বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার প্রতিকারকে আমরা দুইভাবে বিবেচনা করতে পারি। গ্যাস্ট্রিকের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দূরীকরণ এবং হঠাৎ গ্যাস হলে তখন করণীয়—দুই ক্ষেত্রের জন্যই সমাধান আছে যোগব্যায়াম বা ইয়োগাতে। এমন দুটি আসন সম্পর্কে জানা যাক।

গ্যাস্টিকের লক্ষণ:

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে খিদে কম পায়, পেটে গ্যাস হয়, বুক জ্বালা করে ও পেটের মাঝখানে চিনচিন ব্যথা, বুক ও পেটে চাপ অনুভূত, হজমে অসুবিধা এবং বমি হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বেশি হলে সবাই কম বেশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেয়ে থাকেন হয়তো। বিশেষজ্ঞের মতে, ওমিপ্রাজলজাতীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বছরের পর বছর খাওয়া বিপজ্জনক। এতে পাকস্থলীর পিএইচ পরিবর্তিত হয়ে যায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক কি?

সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা হবে। খালি পেটে কিংবা ভোররাতের দিকে ব্যথা তীব্র হয়।গলা-বুক-পেট জ্বলে, টক ঢেঁকুর ওঠে। ঝাল-তেল-মসলাজাতীয় খাবারে ঝামেলা বেশি করে।

তবে আপনি জানেন কি- ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?

সকালে বাসি পেটে প্রচুর পানি পান করুন : গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।যাদের সমস্যা নেই তারাও খেতে পারে। বাসি পেটে পানি খেলে শরীর ভালো থাকে।

ভাজাপোড়া : ভাজাপোড়া ঘরে বা বাইরে যাই হোক না কেন। অতিরিক্ত কখনোই খাবেন না। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ।ভাজাপোড়া খাবার যে তেলগুলো থাকে বিশেষ করে বাইরের খাবার খাবেন না।

নিয়ম মেনে খাবার খান : অনেকে সকালের খাবার দুপুরে, দুপুরের খাবার রাতে খান। এটি গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ। তাই নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে।খাবারে অনিয়ম করা যাবে না। এর ফলে শুধু গ্যাস্ট্রিক না পাইলসও হতে পারে।

পেটে খালি রাখা যাবে না : খালি পেটে থাকা গ্যাসের অন্যতম সমস্যা। তাই কখনোই খালি পেটে থাকবেন না। এছাড়া অতিরিক্ত খাবার খাওয়া গ্যাসের কারণ হতে পারে।

আলুর রস :

১. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার অন্যতম ভাল উপায় হল আলুর রস। আলুর অ্যালকালাইন উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণগুলো রোধ করে থাকে।

২. একটি বা দুটো আলু নিয়ে গ্রেট করে নিন। এর গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করে নিন। এরপর আলুর রসের সাথে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এই পানীয় দিনে ৩ বার পান করুন। প্রতি বেলায় খাবার ৩০ মিনিট আগে খেয়ে নিন আলুর রস। তবে অন্তত ২ সপ্তাহ পান করুন এই পানীয়।

আদা :

১. আদাতে আছে এমন কিছু উপাদান যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যায়।

২. আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।

৩. আদা কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।

৪. আপনি চাইলে আস্ত আদা ধুয়ে কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন।

কলা : আমরা সবাই কমবেশি কলা খায়। মূলত সকালে নাশতার টেবিলে বেশি দেখা যায় কলা। আর পেটের গ্যাস দূর করতে কার্যকরী ফল কলা। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। তাই চেষ্টা করুন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে একটি কলা খেতে। এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দ্রুত কমিয়ে আনবে।

মৌরি : মৌরি খুব দ্রুত গ্যাসের ব্যথা কমাতে কাজ করে। সে কারণে খাওয়ার পরে মৌরি চিবিয়ে খেতে হবে। এতে অ্যাসিড হওয়ার কোনো ভয় থাকে না। এ ছাড়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরিষ্কার পানিতে মৌরি ভিজিয়ে ঢেকে রেখে দিন। পরদিন সকালে উঠে পানিটুকু ছেঁকে নিন। এবার সেই পানি খালি পেটে পান করুন। সারাদিন আর গ্যাসের সমস্যা হবে না। পেটও ফুলে থাকবে না।

তুলসী পাতা : আমাদের পাকস্থলীতে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ উৎপাদন করে তুলসী পাতা। তাই তুলসী পাতার উপকার পেতে হলে নিয়মিত খেতে হবে এটি। চেষ্টা করুন সকালে চায়ের মধ্যে ২/৩টি পাতা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে সে চা পান করতে। এতে দারুন উপকার পাবেন।

ঠান্ডা দুধ : এক গ্লাস ঠাণ্ডা, চর্বিহীন এবং চিনিহীন দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সময় অনুভূত জ্বালাপোড়া থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পাওয়া যায়। দুধে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা কেবল অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে না বরং এর উৎপাদনকেও বাধা দেয়।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সাধারণ মনে হলেও এর কষ্ট কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। তাই গ্যাস্ট্রিক দেখা দিলে তাদের জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। বিশেষ করে খাবারের ক্ষেত্রে থাকতে হয় অনেক বেশি সতর্ক। অনেকগুলো খাবার যোগ এবং বিয়োগ করতে হয় প্রতিদিনের তালিকা থেকে। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে এড়িয়ে যেতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো সম্পর্কে-

১. পপকর্ন :

পপকর্ন পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এটি পৃথিবীজুড়েই খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। কিন্তু এই খাবারে থাকা অতিমাত্রায় ফাইবার অনেকের ক্ষেত্রে হজমে গণ্ডগোলের কারণ হতে পারে। পপকর্নে থাকা ফাইবারের কারণে গ্যাস, পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হালকা ধরনের এই খাবার পরিপাক ক্রিয়ায় অতিরিক্ত বায়ু যোগ করতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে পপকর্ন এড়িয়ে চলুন।

২. কাঁচা সবজি :

অনেকে স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় কাঁচা সবজি যোগ করেন। কাঁচা সবজিতে সালফার বা গন্ধকের যৌগ থাকে। এ ধরনের যৌগ থেকে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে কাঁচা সবজি দিয়ে তৈরি সালাদ খেলে কারও কারও ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে কাঁচা সবজি খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে।

৪. পেঁয়াজ :

পেঁয়াজের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আবার রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিকও। যেমন পেঁয়াজে থাকা এক ধরনের কার্বোহাইড্রেড ফ্রুক্টন অনেকের শরীরই হজম করতে পারে না। মানুষের শরীরে প্রবেশের পর এই ফ্রুক্টন যখন ভাঙতে শুরু করে তখন পরিপাক পদ্ধতিতে গ্যাস তৈরি হয়। তাই পেঁয়াজ খেলে কারও কারও ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে খাবার থেকে পেঁয়াজ বাদ দেওয়াই উত্তম।

৫. আপেল :

আপেল আসলে স্বাস্থ্যকর একটি ফল। কিন্তু এটি গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। এর কারণ হলো, আপেল, পিচের মতো ফলে ফ্রুক্টোজের মাত্রা খুব বেশি থাকে। এর প্রভাবে শরীরে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে আপেল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যদি প্রতিদিনই হয় এবং সেটা গুরুতর পর্যায়ের হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সব ঘরোয়া উপাদান সবার জন্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি পেঁপে খেলে অ্যালার্জি দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই পেঁপে খাবেন না। মনে রাখবেন, এসব ঘরোয়া উপাদান কিংবা ওষুধ আমাদের গ্যাস্ট্রিক থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। এই অস্বস্তিদায়ক সমস্যা থেকে সত্যিকারের মুক্তি পেতে চাইলে লাইফস্টাইল এবং ডায়েটে পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই।

এছাড়া ওজন কমানো, খাবার গ্রহণের সময়ের সঠিক ব্যবধান রাখা, খালি পেটে চা না খাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজের আয়ত্বে রাখতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। উল্লেখিত খাবারগুলোর সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। কিনতে হবে না ওষুধ এবং সাশ্রয় হবে আপনার উপার্জিত অর্থ।

ডায়েটের মাঝে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ক্ষুধা
Prev Post ডায়েটের মাঝে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ক্ষুধা
ফিট রাখবে যে সকল সহজ ব্যায়ামে
Next Post ফিট রাখবে যে সকল সহজ ব্যায়ামে

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *