Search

টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপার শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস ডেস্ক

  • 0
  • 2 views

স্পোর্টস ডেস্ক :

২০২১ সালের আসরে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৫তম কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এবার কলম্বিয়াকেও ম্যাচের একমাত্র গোলে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখলো লিওনেল মেসিরা। এতে কোপায় সর্বকালের সবচেয়ে সফল দলের তকমা পেয়েছে আলবিসেলেস্তারা। এটি আর্জেন্টিনার ১৬তম শিরোপা। এর আগে আর্জেন্টিনার সমান ১৫টি শিরোপা জিতেছিল উরুগুয়ে।

কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ফাইনালে খেলার মূল সময়ে অনেক চেষ্টা করেও গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া। অতিরিক্ত সময়েরও ২২ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। ততক্ষণে সবাই টাইব্রেকারের প্রহর গুনছিল। অবশেষে ১১২ মিনিটে গোলের মুখ দেখলো চলতি কোপার ফাইনাল। আর্জেন্টিনাকে গোল উপহার দিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। এতে ১-০ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার।

সোমবার (১৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে খেলার মূল সময় শেষেও পরিসংখানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান কোপা চ্যাম্পিয়নদের মতো খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ম্যাচে বল দখল, আক্রমণ ও লক্ষ্যে শট নেওয়ায় এগিয়ে কলম্বিয়া।

এদিন টিকিট ছাড়াই দর্শকদের মাঠে ঢুকে পড়ার কারণে সময় মতো খেলা শুরু করতে পারেনি আয়োজকরা। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় দর্শকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে তারা। অবশেষে সকাল ৬টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ম্যাচটি শুরু হয় ৭টা ২৫ মিনিটে।

২০২১ কোপা আমেরিকার পর ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ। আর এবার ২০২৪ কোপা আমেরিকা- লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে টানা তিনটি বড় শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। ইউরোপে এই অর্জন আছে শুধু স্পেনের। ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরো জয়ের মাঝে তারা ২০১০ সালে জিতেছিল বিশ্বকাপ।

প্রথম ৪৫ মিনিটে স্পষ্ট আধিপত্য ছিল কলম্বিয়ার। বল দখলের লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকা নেস্তর লরেন্সোর দল প্রথমার্ধে গোলের জন্য নেয় আটটি শট, এর চারটি ছিল লক্ষ্েয। আর আর্জেন্টিনার তিনটি শটের কেবল একটি ছিল লক্ষ্যে।

দ্বিতীয়ার্ধে বাড়ে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার। বল দখলের লড়াইয়ে আধিপত্য ধরে রাখে কলম্বিয়াই। তবে পরের ৪৫ মিনিটে তাদের ছয় শটের একটিও লক্ষ্যে থাকেনি। বিপরীতে আরও চারটি শট করে দুটি লক্ষ্যে রাখে আর্জেন্টিনা।

শুরুটা অবশ্য ভালো করেছিল আর্জেন্টিনাই। প্রথম মিনিটে গনসালো মন্টিয়েলের ক্রসে ডি-বক্সের মাঝে বল পেয়ে যান হুলিয়ান আলভারেস। কিন্তু তার ডান পায়ের শট বাম পাশ দিয়ে চলে যায় বাইরে।

এরপর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে কলম্বিয়ার দাপট। পঞ্চম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের শট নেন লুইস দিয়াস। তেমন গতি না থাকায় ঠেকাতে সমস্যা হয়নি এমিলিয়ানো মার্তিনেসের। এক মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে হন কর্দোবার শট দূরের পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফা আর্জেন্টিনার রক্ষণে হানা দেয় কলম্বিয়া। তবে লিসান্দ্রো মার্তিনেস, নিকোলাস তাগলিয়াফিকোদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি তারা।

পঞ্চদশ মিনিটে ফ্রি-কিক পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর মারেন রদ্রিগেস। ২০তম মিনিটে বড় সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। জায়গা বদলে বাম পাশে চলে আসেন আনহেল দি মারিয়া। তার ঠাণ্ডা মাথার ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে বাম পায়ের শট করেন লিওনেল মেসি। কিন্তু আলভারেসের পায়ে লেগে গতি হারায় বল। ফলে সহজেই ঠেকিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস।

৩৩তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আচমকা দূরপাল্লার শট নেন লের্মা। ডান দিকে ঝাঁপ দেওয়া এমিলিয়ানোর আঙুল ছুঁয়ে পোস্টে লেগে বল চলে যায় বাইরে। দুই মিনিট পর ডি-বক্সের মুখে বল পেয়ে কলম্বিয়ার একজনের চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইলাইনের কাছে পড়ে যান মেসি। চোট পান ডান পায়ে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে মাঠেই শুশ্রূষা নিয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বিরতির আগের বাকি সময়টায় তাকে খুড়াতে দেখা যায়।

৪০তম মিনিটে রিচার্ড রিয়োসের ক্রসে হন আরিয়াসের দুর্বল হেড ঠেকান এমিলিয়ানো। পরের মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন রিয়োস। বাম দিকে ঝাঁপিয়ে থামান আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। ৪৩তম মেসির ফ্রি কিকে তাগলিফিয়াকোর হেড চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। গোল ছাড়াই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতির পর একই গতিতে চলতে থাকে খেলা। ৪৭তম মিনিটে কর্দোবার ফ্লিকে বল পেয়ে ডি-বক্সের ডান পাশ থেকে সান্তিয়াগো আরিয়াসের ডান পায়ের শট অল্পের জন্য দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে দারুণ জায়গায় পান আলেক্সিস মাক আলিস্তের। কিন্তু শট করতে পারেননি তিনি। তার আলতো টোকায় বল পেয়ে জোরাল শট করেন দি মারিয়া। খুব কাছ থেকে রুখে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক।

৫৪তম মিনিটে রদ্রিগেসের কর্নার কিক থেকে হেডে দাভিনসন সানচেসের দিকে দেন কর্দোবা। ফাঁকায় পেয়েও পরের হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সানচেস। বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। তিন মিনিট পর দি মারিয়ার ক্রসে ডি-বক্সের মাঝ থেকে হেড করেন মাক আলিস্তের। কলম্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের হাতে লেগে ফিরে আসে বল। তবে হাত সহজাত অবস্থানে থাকায় পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা।

পরের মিনিটে বাম পাশ থেকে দি মারিয়ার বাম পায়ের প্লেসিং শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকান ভারগাস। ৬২তম মিনিটে রদ্রিগেসের ফ্রি কিক থেকে ফিরতি বলে দূরপাল্লার শট নেন লের্মা। বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায় বল।

এক মিনিট পর ডান পায়ের চোট ফিরে এলে মাঠে পড়ে যান মেসি। ফিজিও মাঠে ঢুকেই ইঙ্গিত করেন তাকে উঠিয়ে নেওয়ার। তার বদলে মাঠে নামেন নিকোলাস গনসালেস। কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ডাগ আউটে বসেও কাঁদতে থাকেন মেসি। ৭০তম মিনিটে চোট পান মন্টিয়েল। তার জায়গায় নামানো হয় নাহুয়েল মোলিনাকে।

পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান গনসালেস। কিন্তু তাকে পাস দেওয়া তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। ৭৯তম মিনিটে রদ্রিগেসের ক্রসে ডি-বক্সের মাঝ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কার্লোস কুয়েস্তা। দুই মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে বাম পাশে পাওয়া ফ্রি-কিক রক্ষণ দেওয়াল বরাবর মারেন রদ্রিগেস।

৮৮তম মিনিটে ডান পাশ থেকে লম্বা ক্রস দেন দি মারিয়া। বাম পাশে পোস্টের কাছাকাছি থেকে লাফিয়ে হেড করেন গনসালেস। অল্পের জন্য দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায় বল। সময়মতো কাছাকাছি আসতে না পারায় পা ছোঁয়াতে পারেননি আলভারেস।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে কলম্বিয়া ডিফেন্ডারের ভুলে ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান দি মারিয়া। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শট করতে পারেননি জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তৃতীয় মিনিটে দি মারিয়ার কর্নার কিক থেকে ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর হেডে ডি-বক্সের মাঝে বল পান গনসালেস। কিন্তু তার শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। মূল ম্যাচের শেষ দিকে দুটি সুযোগ হারিয়ে অতিরিক্ত সময়ে যায় আর্জেন্টিনা।

টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচগুলোতে এই নিয়ম ছিল না। খেলার ৯০ মিনিট যদি সমতায় শেষ হতো তাহলে সরাসরি টাইব্রেকার দেওয়া হতো। তবে ফাইনাল ম্যাচে সেই নিয়ম নেই। খেলার ৯০ মিনিট শেষে সমতা থাকলে আরও ৩০ মিনিট খেলা হবে। যার জন্য এই ম্যাচও গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।

অতিরিক্ত সময়েও একের পর এক আক্রমণ করে গেছে দুই দল। তবে কাঙ্খিত গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না কোনও দল। অবশেষে সোনার হরিণ নামক সেই গোলটি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ১১২ মিনিটে এলো কাঙ্খিত সেই গোল। মাঝমাঠ থেকে লাউতারো মার্টিনেজকে বল বাড়িয়ে দিলেন লো সেলসো। বক্সের ভেতরে ঢুকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান লাউতারো। আর সেই গোলেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা। সেইসঙ্গে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে এককভাবে সর্বোচ্চ ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন এখন আর্জেন্টিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীরের ব্যাংক হিসাব জব্দ
Prev Post প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীরের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অভিষেকে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার ইবাদুল্লার মৃত্যু
Next Post অভিষেকে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার ইবাদুল্লার মৃত্যু

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *