Search

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • 0
  • 2 views

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ডেঙ্গু মশাবাহিত ভাইরাল রোগ। সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। তবে কয়েক বছর ধরে শুধু বর্ষাকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এডিস মশার আক্রমণ। বছরের অনেকটা সময় জুড়েই থাকছে ডেঙ্গুজ্বর। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হলো, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি।দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। এক মাসের রেকর্ড ভাঙছে আরেক মাস।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮ জন, ২০০৩ সালে ১০ জন, ২০০৪ সালে ১৩ জন, ২০০৫ সালে চার জন এবং ২০০৬ সালে ১১ জন মারা যায়। ২০০৭ সালে থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। ২০১১ সালে মারা যান ৬ জন, ২০১২ সালে একজন, ২০১৩ সালে দুই জনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালে কেউ মারা যাননি। ২০১৫ সালে মারা যান ৬ জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ৮ জন, ২০১৮ সালে ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৪ জন, ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জনের মৃত্যু হয়, যা ছিল দেশে এক বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। সেটিকে ছাড়িয়ে গেছে এ বছর।

দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্রমাগত চরিত্র পালটাচ্ছে এডিস মশা। গত বছর প্রথম ৯ মাস ১০ দিনে যত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছে এবার মৃতের সংখ্যা তার চেয়ে প্রায় ২২ গুণ বেশি। তারপরও মশক নিধন ও চিকিৎসা দুটিই সংকটে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মশা মারার কার্যকর পদক্ষেপ নেই। দ্রুত মশা মারার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে যেহেতু এডিস মশার চরিত্র পালটেছে, তাই চিকিৎসা পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাপনা নির্ধারণে জাতীয় কমিটি গঠনের তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, চরিত্র পালটেছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা। শুধু দিনেই নয়, এডিস মশা এখন কামড়ায় রাতেও। হোক পরিষ্কার কিংবা ময়লা, যে কোনো আবদ্ধ পানিতেই জন্মাচ্ছে এডিসের লার্ভা। শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই এখন এডিস মশা। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। দিনদিন যেন শক্তিশালী হচ্ছে এডিস মশা। তাই মশা মারার কোনো বিকল্প নেই। মশা মারতেই হবে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তরা মশা না মেরে কি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন? চিহ্নিত শত্রু মশা মারতে না পারার কারণ কি? প্রতিদিন প্রায় এক ডজনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মশা মারার জন্য বলে আসছেন। কিন্তু মশা মারার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই কেন? এদিকে গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। আজিমপুর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ছিল হাঁটুসমান পানি। এই স্কুলে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। রাজধানীর ড্রেনও যে পরিষ্কার করা হয়, সেজন্যই মূলত এখানে হাঁটুসমান পানি। বিভিন্ন দেশে দিনে কমপক্ষে দুই বার ড্রেন পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশন কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশ।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণসমূহ :

জ্বর। শরীরে ব্যথা বিশেষত জয়েন্টে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা। শরীরে লালচে র‌্যাশ। পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। কাশি। ক্ষুধামন্দা। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, ক্লান্তি।শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ (মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো রঙের পায়খানা, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত)। রক্তচাপ কমে যাওয়া, পালস রেট বেড়ে যাওয়া।এখন যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি, ডেঙ্গুর ধরনও বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। এই সময় ডেঙ্গু জ্বর বেড়ে যায়। ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত। সাধারণত, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়।

ডেঙ্গু টেস্ট কী কী?

কারও যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ থাকে এবং আশপাশে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কিংবা ওই এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে উচিত হবে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করানো। সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না তা শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় অর্থাৎ জ্বর হওয়ার বা ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়ার তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা সাধারণত এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন বা ঘঝ১ পরীক্ষা করাতে বলেন। এর মাধ্যমে ননস্ট্রাকচারাল প্রোটিন দেখা হয়। ক্লাসিকাল ডেঙ্গি সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। রক্ত পরীক্ষায় ঘঝ১ পজিটিভ আসা মানে রোগী ডেঙ্গু পজিটিভ। তবে এই পরীক্ষাটি ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার বা লক্ষণ দেখা দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে এটি ডেঙ্গুর সংক্রমণ সনাক্ত করতে পারে। এর পরে এই টেস্ট আর কার্যকরী হয় না। পরীক্ষা প্রথম তিন দিনের মধ্যে করলে সবচেয়ে ভালো ফল দেয়। পঞ্চম দিন থেকে এনএসওয়ান নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কী খাবার খেতে হয়?

ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে হয়। সেইসাথে বাড়িতে ফল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খাবারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনে ১০-১২টা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে পানি খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।

কখন হাসপাতালে যেতে হয় :

ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন—নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।

‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।

‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

প্রচুর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পরপর।

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

যা করবেন না

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট এখন আর মূল বিষয় নয়। প্লাটিলেট হিসাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। অনেকে বলেন, পেঁপেপাতার জুস ইত্যাদি খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। আসলে এসবের কোনো ভূমিকা নেই। জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পেরিয়ে গেলে আপনা থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করে। জ্বরের শেষের দিকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে অথবা মাড়ি, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এ রকম হলে প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হবে?

এডিস মশা কামড়ালেই যে মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হবে, বিষয়টি তেমন নয়। তবে যে এডিস মশাটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করছে, সেটি কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। আবার কোন সুস্থ এডিস মশা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে তাহলে মশাটির মধ্যে ডেঙ্গুর ভাইরাস সংক্রমিত হবে। এরপর ওই ভাইরাসবাহী মশা সংক্রমিত থাকা অবস্থায় যদি আবার সুস্থ কোন মানুষের শরীরে কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। যেকোন মশার মতই এডিসও সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। তাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর ঐ মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মশা কামড়ানোর পর কী করলে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?

মশা কামড়ালে সেটি রক্তের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তেমন কিছু করার থাকে না। তবে মশা কামড়ানোর পর ভাইরাসটি যদি শুধুমাত্র চামড়ার ওপরে লেগে থাকে তাহলে ওই স্থানটি ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ধুলে ভাইরাস মরে যাবে। তবে একবার রক্তের সাথে ভাইরাস মিশে গেলে কোন কিছুই কাজ করবে না।

ডেঙ্গু জ্বর কী ছোঁয়াচে রোগ?

ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ঘোষ। অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এই রোগ শুধুমাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। ফলে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় কোনও বাধা নেই, কিংবা তাকে আলাদা রাখার কোনও প্রয়োজনও নেই।

ডেঙ্গু মশা কোথায় থাকে, কোথায় ডিম পাড়ে?

এডিস মশা সাধারণত শুকনো ছায়াযুক্ত নিরাপদ স্থানে বিশ্রাম নেয়। এই মশাটি যেকোনো জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। সাধারণত পাত্রের কিনারার দিকে ডিম পেড়ে থাকে। এই ডিম ফুটে লার্ভা হয়, লার্ভা থেকে পিউপা হয়, পিউপা থেকে হয় পূর্ণাঙ্গ মশা। জমে থাকা পানি পরিষ্কার বা নোংরা কিনা সেটা বিষয় নয়। পানিটি টানা কয়েকদিন স্থির থাকলে সেখানে ডিম ছাড়তে পারে এডিস মশা। এক সময় বলা হতো এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় সেই বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। সাধারণত জমা পানি ফেলে দিলে কিংবা ওই পানিতে সাবান বা ব্লিচিং মেশানো পানি ছিটিয়ে দিলে মশার ডিম ধ্বংস হয়ে যাবে।

চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে- ক্লাসিকাল এবং হেমোরেজিক। ক্লাসিকাল ডেঙ্গু সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। সর্বোচ্চ ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

‘ডেঙ্গু মশা’ কামড়ালে কি ফুলে যায়?

যদিও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার নাম এডিস এজিপ্টি, কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এই মশা ‘ডেঙ্গু মশা’ নামেও পরিচিত। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ালে, ওই স্থানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছুটা ফুলে যায় এবং চুলকায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে মশা কামড়ানো সত্ত্বেও ফুলে যাওয়া বা চুলকানি কোনটি নাও হতে পারে। তবে মশা রক্ত খাওয়ার জন্য যখন হুল ফোটায় তখন বেশিরভাগ মানুষ তা টের পান না। এর কারণ মশা হুল ফোটানোর আগে কিছুটা ব্যথানাশক ঘন তরল মানুষের ত্বকের ভেতর ছড়িয়ে দেয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য ত্বকের ওই অংশটি অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অবশ ভাব চলে গেলে ত্বকের ওই জায়গা একটু চুলকায় এবং ফুলে যায়।

‘ডেঙ্গু মশা’ দেখতে কেমন?

অনেকেই জানতে চান, ‘ডেঙ্গু মশা’ দেখতে কেমন? ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব। মশাটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর গায়ে-পায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে আর্মিগিয়ার নামে একটি মশার পেটেও একই ধরণের ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। তবে, এ মশাটি আকারে একটু বড় হয়। অনেকে এই মশাটিকে এডিস অ্যাজিপ্টি বলে ভুল করে। আপনাকে যে মশা কামড়েছে সেটি এডিস কিনা নিশ্চিত হতে মশাটির পায়ের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। শুধুমাত্র এডিস মশার পায়েই ডোরাকাটা দাগ থাকে।এছাড়া পুরুষ মশার অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা রোমশ হয়ে থাকে। স্ত্রী মশার এমনটা থাকে না।

মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা

মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। এডিস মশা সাধারণত আবদ্ধ পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। আপনার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পানি জমে আছে কি না তা খেয়াল রাখুন। ৩ দিন পরপর পানির খালি বোতল, ফুলের টব, ভাঙা বালতি-মগ, পুরোনো টায়ার ও ডাবের খোলা প্রভৃতিতে জমে থাকা পানি ফেলে দিন। মশা বর্জ্য ও ময়লায় আকৃষ্ট হয়। তাই আপনার বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।

মশা নিরোধক ব্যবহার করুন

শরীরের উন্মুক্ত স্থানে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় শিশুর বয়স ও শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। প্রতিরোধক কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ুন।

ডেঙ্গু সচেতনতা

প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করুন। তাদের বাড়ি-ঘর ও আশেপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্বুদ্ধ করুন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং শিশুর জ্বর হলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডেঙ্গু পরীক্ষা করুন।

 

১৪৮৯০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
Prev Post ১৪৮৯০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
থাইরয়েড কী, লক্ষণ ও করণীয়
Next Post থাইরয়েড কী, লক্ষণ ও করণীয়

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *