Search

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • 0
  • 4 views

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ড্রাগন ফল বিদেশি হলেও আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। আর সেই কারণেই দেশের বাজারে এখন প্রচুর ড্রাগন ফল পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে দামি ফল হিসেবে খেতে চান, কিন্তু জানেন না এতে কী কী পুষ্টিগুণ আছে।ড্রাগন ফলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। ক্যালরি কম থাকায় এই ফল খেলে ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

কি ভাবে ড্রাগন ফল খাবেন?

ড্রাগন ফল কাটলে বাইরে খোসা ও ভিতরে সাস থাকে। ভিতরের অংশটি খেতে হয়। এর মধ্যে ছোট ছোট কালো বীজ থাকে। সেই বীজও খেতে হয়। ফল কাটার পরে বাইরের খোসা থেকে সহজেই ফল বেরিয়ে আসে।ওই অবস্থায় এমনিতেই খাওয়া যায়। এ ছাড়া পাকা ফল স্যালাডের সাথে, পেষ্ট করে দুধের সাথে, দইয়ের সাথে, যে ভাবে যে পছন্দ করে, সে ভাবেই খেতে পারে, উপকার একই থাকে।এখন যেহেতু ড্রাগন ফল সহজেই পাওয়া যায়, তাই ড্রাগন ফল খাওয়া দরকার। আপনার ফলের তালিকায় অবশই ড্রাগন ফল রাখুন।

ড্রাগন ফলের গাছ :

ড্রাগন ফল বেশ কয়েক প্রকার হয়। কোনওটির মধ্যে সাদা- বাইরে লাল, আবার কোনওটির ভিতরে ও বাইরে লাল রঙ, আবার কোনওটির বাইরে হলুদ রঙের। কাঁচা অবস্থায় এর রঙ সবুজ, পাঁকলে অন্য রঙ ধরে।

ড্রাগন ফলের ইতিহাস:

Hylocereus Undatus হচ্ছে এটির বৈজ্ঞানিক নাম। ২০০৭ সালের দিকে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আমাদের দেশে আনা হয়। এটি প্রধানত মধ্য আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মালয়েশিয়াতে এ ফলের চাষাবাদ শুরু হয়। তবে ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বর্তমানে এ ফলটি আমাদের দেশেও চাষ করা হচ্ছে।

ড্রাগন ফল দেখতে কেমন:

এই ফলটি সম্পর্কে জানতে আমাদের সকলেরই কমবেশি আগ্রহ রয়েছে। এই ফলটি এক ধরনের ফণীমনসা (ক্যাক্টাস) প্রজাতির। তাই এর গায়ে সামান্য কিছু কাঁটার মতো অংশ রয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই ফলটি লাল রংয়ের হয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে চার রকমের ড্রাগন ফল দেখতে পাওয়া যায়—লাল বাকল, লাল শাঁস; হলুদ বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল ও নীলচে লাল শাঁস।

রঙের ভিন্নতা অনুযায়ী স্বাদের ক্ষেত্রেও কিছু পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়। এটি পাতাবিহীন এবং দেখতে কিছুটা ডিম্বাকার হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রূপকথার ড্রাগনের পিঠের সাথে এই ফলের বাইরের খোসা মিলে যায় বলে এটিকে এমন নামে ডাকা হয়।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ:

ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালরি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ থাকে। এই ফলে বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও রয়েছে। এটিতে থাকা ফাইবার ও আয়রন আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী।বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে ত্বক, চোখ ও ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি করে।

ড্রাগন ফল এর উপকারিতা:

পুষ্টিগুণ ও শারীরিক উপকারিতা কথা বিবেচনায় ড্রাগনফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ফলটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নীচে এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় :

ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পরিচিত। এটি আংশিকভাবে ফলের মধ্যে থাকা ফাইবারের কারণে যা চিনির স্পাইক এড়ায়। কিছু গবেষক ক্ষতিগ্রস্থ অগ্ন্যাশয় কোষ প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতার জন্য এই সুবিধাটিকে দায়ী করেন। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করে যা চিনিকে ভেঙে দেয়। তাই ড্রাগন ফলকে চিনি নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী করা হয়।

২. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় :

ড্রাগন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং বিটাসায়ানিন সমৃদ্ধ, যা ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা ক্ষতি প্রতিরোধ করে। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল হল এমন পদার্থ যা ক্যান্সার এবং অকাল বার্ধক্য সৃষ্টি করে। প্রধানত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে একটি হল ভিটামিন সি যা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, আল্জ্হেইমের, পারকিনসন্স ইত্যাদি ড্রাগন ফলের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা এটি।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:

একটি ড্রাগন ফলে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের চারভাগের প্রায় একভাগ। এটা অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরণে সহায়তা করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা রয়েছে তারা এই ফল খেলে উপকার পেতে পারেন। সালসা তৈরি করে অথবা ফ্রুট সালাদ বা স্মুদিতে যোগ করে ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এই ফলের স্বাদ হালকা।

৪. হার্টের উপকার করে:

ড্রাগন ফলের বীজে হার্টের জন্য উপকারী ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। নিউ ইয়র্কের পুষ্টিবিদ ও দ্য স্মল চেঞ্জ ডায়েটের লেখক কেরি গানস বলেন, ‘ড্রাগন ফলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে। একারণে এই ফল খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি ও জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়। ড্রাগন ফল খেলে বিষণ্নতাও কমতে পারে।’

৫. হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে:

অধিকাংশ ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এটা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। অস্টিওপোরোসিসে হাড় এতই দুর্বল হয়ে যায় যে সহজেই ভেঙে পড়তে পারে। এক বাটি ড্রাগন ফলে দৈনিক সুপারিশকৃত ম্যাগনেসিয়ামের প্রায় ১৮ শতাংশ পাওয়া যায়। জার্নাল অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল রিসার্চে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এমন নারীদের হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ড্রাগন ফল বিশেষ সহায়ক হতে পারে।

৬. রক্ত চলাচল বজায় রাখে:

বিশ্বের একটি অতি পরিচিত পুষ্টি ঘাটতি হলো আয়রনের ঘাটতি। নারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। মাংস, মাছ, বাদাম ও ডাল জাতীয় খাবার থেকে আমরা অধিকাংশ আয়রন গ্রহণ করে থাকি। মাত্র কিছু ফলে উচ্চ পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। এসব ফলের একটি হলো ড্রাগন ফল। ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে, যা দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রার ১০ শতাংশেরও বেশি। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন, যা শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে।

৭. চুলপড়া প্রতিরোধ করে:

আয়রন ঘাটতির কারণে চুলপড়া সমস্যাও হতে পারে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে চুলপড়া কমতে পারে। এছাড়া নিউ ইয়র্ক সিটির আইকান স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর গ্যারি গোল্ডেনবার্গের মতে, এই ফল আয়রন ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার অন্যান্য উপসর্গও প্রশমিত করতে পারে, যেমন- অত্যধিক ক্লান্তি, ত্বকের বিবর্ণতা, মনোনিবেশে সমস্যা, মাথাব্যথা ও হাত-পায়ে ঠান্ডা অনুভূতি।

৮. ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে:

ভাইরাস সংক্রমণে আমরা সাধারণত কমলার মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের দিকে ঝুঁকে পড়ি, কারণ ভিটামিন সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ডায়েটে ড্রাগন ফলকে রাখার কথাও বিবেচনা করতে পারেন। এতেও প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। বেথ ওয়ারেন নিউট্রিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ বেথ ওয়ারেন বলেন, ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস জনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রয়োজন তা ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের একটি প্রাচুর্যপূর্ণ উৎস হলো ড্রাগন ফল।’

ড্রাগন ফলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

ড্রাগন ফলের প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হল অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যা এটি ঘটায়। এতে জিহ্বা ফুলে যাওয়া, আমবাত বা বমি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি অস্থায়ী, মানুষের একটি ছোট অংশে ঘটে এবং ফল সম্পূর্ণরূপে সিস্টেমের বাইরে চলে গেলে অদৃশ্য হয়ে যায়।সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ বিচারে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনবদ্য। এত কিছু ভালো দিক থাকার পরেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো:

এলার্জি:
ড্রাগন ফল ভিটামিন, অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট, পলিফেলন এবং ফাইবারের ভালো উৎস। কারোর কারো এই অতিরিক্ত ফলটি গ্রহণ করলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার যদি এই ফলে এলার্জির সমস্যা থাকে তবে আপনার এটি না খাওয়াই উত্তম। আরও পড়তে পারেনঃ এলার্জি দূর করার উপায়

ডায়রিয়া:

ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। অতিরিক্ত ফাইবার খেলে আমাদের পেটে সমস্যা হতে পারে। এমনকি ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।
হাইপারটেনশন:

ড্রাগন ফল পটাশিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি একটি অপরিহার্য খনিজ যা আমাদের রক্তবাহী পদার্থকে শিথিল করে, রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে এবং আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিতভাবে সঠিক পরিমাণে ড্রাগন ফল খেলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হবে।

বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসারকে কমিয়ে দেয় যাকে হাইপোটেনশন বলে। হাইপোটেনশনের ফলে আমাদের ব্লাড প্রেসার ওঠা নামা করতে পারে যার ফলে মাথা ঘোরা, বমিভাব, ডিপ্রেশন, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি সমস্যা হয়।

কিছু পরিমাণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ভুলিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদেরকে এটি অল্প বা সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।

এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি ড্রাগন ফলের রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। ড্রাগন ফল খাওয়ার সহজ উপায় হল সালাদের সাথে এটি খাওয়া, গ্রীক দইয়ের টপিং হিসাবে এটি ব্যবহার করা, এটি জুসে চেপে রাখা বা আইসক্রিমে রাখা। নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া আপনাকে রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।

তালের পায়েস বানানো রেসিপি
Prev Post তালের পায়েস বানানো রেসিপি
আমার ভারত সফর দেশের মানুষের জন্য গৌরবের : প্রধানমন্ত্রী
Next Post আমার ভারত সফর দেশের মানুষের জন্য গৌরবের : প্রধানমন্ত্রী

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *