Search

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • 0
  • 4 views

নিজস্ব প্রতিবেদক  :

একটি জনপ্রিয় ও অন্যান্য ফল যা টক স্বাদের জন্য পরিচিতি। তেঁতুল বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যবাহী একটি ওষুধ। । বিভিন্ন রান্না ও খাবারে এই তেঁতুল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুল এমন একটি ফল যার নাম শুনলেই প্রতিটি মানুষের জিবে জল চলে আসে। ছেলে অথবা মেয়ে যেই হোক না কেন তেঁতুলের নাম শোনা মাত্রই জিবে জল চলে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তেঁতুলের সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। কিন্তু তেঁতুল খাওয়া কি নিরাপদ।

তেঁতুলের পুষ্টিগুণ

তেঁতুলের পুষ্টিগুণতেঁতুলে আছে চোখ ধাঁধানো পুষ্টি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাফলে (আহারোপযোগী) ক্যালসিয়াম আছে ২৪ মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে রয়েছে ১৭০ মিলিগ্রাম। আয়রনের পরিমাণ কাঁচাফলে ১ মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে আছে ১০.৯ মিলিগ্রাম করে।

কাঁচাফলে অন্য পুষ্টি উপাদানগুলো হলো- ১.১ গ্রাম আমিষ, ১৩.৯ গ্রাম শর্করা, ০.২ গ্রাম চর্বি, ০.০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, ০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১.২ গ্রাম খনিজ লবণ এবং খাদ্যশক্তি আছে ৬২ কিলোক্যালরি। পাকা তেঁতুলে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি।

এর প্রতি ফলে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ৬৪.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম চর্বি, ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই, ১১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬২৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.৩ মিলিগ্রাম সিলিনিয়াম, ০.১২ মিলিগ্রাম দস্তা, ০.৮৬ মিলিগ্রাম তামা এবং খাদ্যশক্তি আছে ২৮৩ কিলোক্যালরি।

তেঁতুলের উপকারিতা

ত্বক উজ্জ্বল এবং এক্সফোলিয়েট করে

তেঁতুলের পাল্প যুগ যুগ থেকে ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলে আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (এএইচএ) রয়েছে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তেঁতুলের এএইচএগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং টারটারিক অ্যাসিড। ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে এবং দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে তেঁতুলের রস ব্যবহার করুন। এই এএইচএগুলির পাশাপাশি এতে চিনি এবং পেকটিনও রয়েছে। যা আপনার ত্বককে হাইড্রেট রাখে। ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। অকাল বার্ধক্য রোধ করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমানোর যাত্রায় তেঁতুল অনেক কার্যকর একটি উপাদান। বেশি ওজন হলে হৃদরোগ, কিডনি, লিভারের ব্যাধিগুলির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তেঁতুল খেলে শরীরের ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তেঁতুল শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কাটাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান পরোক্ষভাবে রক্তের শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুলে উপস্থিত উৎসেচক শরীরে শর্করার শোষণ মাত্রা কমিয়ে দিয়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীরা যদি ওষুধের পাশাপাশি নিয়ম করে তেঁতুলও খান, তা হলে সুস্থ থাকতে পারবেন।

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে

তেঁতুল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগা রোগীদের নিয়ম করে তেঁতুল খাওয়া জরুরি। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এই ফল দারুণ উপকারী। হৃদরোগোর ঝুঁকি কমায় তেঁতুল।

হজম জনিত সমস্যা দূর করে

নিয়মিত তেঁতুল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই আমাদের অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে। প্রাচীনকাল থেকে তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্যর ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এবং টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। ডায়রিয়া জনিত পেটে ব্যথা কমাতে তেঁতুলের ছাল এবং মূলের নির্যাস কার্যকরভাবে নিরাময় করতে পারে।

লিভারের সমস্যা সমাধান করে

গবেষণায় দেখা গেছে যে, তেঁতুলের নির্যাস গ্রহণের ফলে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। এতে থাকা প্রোকিয়ানিডিনগুলো লিভারের ফ্রি র‌্যাডিকাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তেঁতুল খনিজ সমৃদ্ধ। যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম লিভারের লিপিড সামগ্রীগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিকাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

হার্টের স্বাস্থ্যর উন্নতি করে

তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হ্রাস করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্রণ করে

তেঁতুলের পাল্পে কার্ব-ব্লকিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি শরীরকে কার্বোহাইড্রেট শোষণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তেঁতুল বেশ উপকারি। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। তেঁতুলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা অগ্ন্যাশয়কে প্রদাহজনক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে

তেঁতুলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফলে এটি বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধান ঔষধি উদ্ভিদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকান উপজাতিরা, প্রাচীন কাল থেকে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় জন্য এটি ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে অনেক সময় জ্বর হয়। এ ক্ষেত্রে, তেঁতুলের রস বেশ কার্যকর।

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

তেঁতুলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ফ্রি র‌্যাডিকালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটিতে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তেঁতুল গলা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা দূর করতেও সহায়তা করে।

চোখের জন্য ভাল

তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এটি কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় সহায়তা করে। প্রাচীনকালে চোখ সম্পর্কিত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য তেঁতুল ব্যবহৃত হত।

চুলের যত্নে

তেঁতুল চুলের যত্নের জন্য একটি কার্যকর উপাদান। মাথার ত্বকে তেঁতুলের রস লাগান। এটি ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটাবে। চুলকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। মাথার ত্বকের ফলিকলের বৃদ্ধি ঘতায়। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তুলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

তেঁতুলের রস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যাদুর মত কাজ করবে। সর্দি, কাশি, ফ্লু দুর করবে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে শরীর থাকে জীবাণুমুক্ত।

ক্যানসার বিরুদ্ধে লড়াই করে

তেঁতুলে সক্সলেট মিথেনলিক এক্সট্রাক্ট রয়েছে। যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। যেহেতু তেঁতুল উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই এটি ক্যান্সারের কোষগুলো নির্মূল করে।

তেঁতুলের অপকারিতা

রক্তপাত বৃদ্ধি করে নির্দিষ্ট ঔষধের ক্ষেত্রেঃ

তেঁতুল রক্তপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে যদি নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের সাথে গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের ঔষধগুলো হচ্ছে

=অ্যাসপিরিন,
=>ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মত নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ (ঘঝঅওউং),
=>রক্ত পাতলা করার ঔষধ (হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি )
=>অ্যান্টি-প্লাটিলেট ড্রাগ (ক্লপিডোগ্রেল)

যদি আপনি এই ঔষধগুলো গ্রহণের সময় তেঁতুল খান তাহলে শরীরে এদের শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।এরা শরীরে অনেক বেশি কাজ করা শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে অধিক রক্তপাত শুরু হয়।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারেঃ
অনেক বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। পুষ্টিবিদেরা প্রতিদিন ১০ গ্রাম তেঁতুল গ্রহণের পরামর্শ দেন।

যা নিয়মিত খাদ্যগ্রহণের ০.৮ % হতে হবে। এর বেশি গ্রহণ করলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা যারা রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর ঔষধ গ্রহণ করেন তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে

তেঁতুলের একটি সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা। অনেক মানুষের মধ্যেই এই ফলটির উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হতে দেখা যায়। এ কারণে তাদের মধ্যে র‌্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

দাঁতের এনামেল নষ্ট করেঃ

তেঁতুল উচ্চ মাত্রার এসিডিক প্রকৃতির। তাই নিয়মিত তেঁতুল খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আপনার দাঁতের জন্য ও খারাপ।

পিত্তপাথর গঠনে সাহায্য করেঃ

ভারতীয় গবেষক প্রমাণ করেছেন যে, ঘন ঘন প্রচুর পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া পিত্তপাথর হতে সাহায্য করে। এর ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পরিপাকের সমস্যা ও লিভারের সমস্যা হতে পারে।

এসিড রিফ্লাক্স বৃদ্ধি করেঃ

তেঁতুল এসিডিক খাবার তাই এটি বেশি খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীতে বিশেষ করে পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই যদি এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনার তেঁতুল খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিৎ। এছাড়াও যদি রক্তনালীর সংকোচনের ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরিত থাকতে হবে। এটি রক্তনালীকে আরো সরু করে দিবে। ফলে রক্তপ্রবাহ কম হবে এবং রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধও হতে পারে। নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় তেঁতুল। যেহেতু ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে, তাই আপনি যদি ইতিমধ্যেই লেক্সেটিভ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তেঁতুল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

লাল আঙ্গুর কেন খাবেন?
Prev Post লাল আঙ্গুর কেন খাবেন?
এনবিআর থেকে সরানো হলো ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরকে
Next Post এনবিআর থেকে সরানো হলো ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরকে

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *