Search

দুশ্চিন্তা যখন ব্রণ নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • 0
  • 1 views

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আয়নার দিকে তাকালেই মন খারাপ হয়। কারণ মুখ ভরে গেছে ব্রণে। লাল লাল, দানাদার, কোনোটি বেশ উঁচু। কিশোর ও তরুণদের একটা বড় দুশ্চিন্তা এই ব্রণ। কিছু কিছু সময় ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্রণের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কারও কারও পরিবারে এর বেশি প্রকোপের ইতিহাস রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৈশোরে ব্রণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। এটি এমনিতেই সেরে যায়। তবে কখনো কখনো সমস্যা বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। তখন দানা বড় হয়, ভেতরে পুঁজ জমে, ব্যথা করে, সঙ্গে দেখা দেয় মানসিক অশান্তি।

ময়লা কিংবা তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ত্বকের তেলগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন ত্বকের ভেতরের দিকে তেল জমে তৈরি হয় ব্রণ। এটি হওয়ার পেছনে বয়স ও বংশগত কারণও থাকে।

কেন ব্রণ হয়?
অত্যন্ত পরিচিত একটি চর্মরোগ ব্রণ। ব্রণের ক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত হরমোন পরিবর্তনজনিত কারণে বয়ঃসন্ধিকালে বেশি ব্রণ হতে

দেখা যায়। কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ হওয়া খুবই পরিচিত সমস্যা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এই বয়সে ব্রণজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। তবে যেকোনো বয়সেই ব্রণ হতে পারে। সাধারণত যেসব কারণে ব্রণ হয়

হরমোনের তারতম্য।
ত্বকের অযত্ন-অবহেলা।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।
জীবাণুর সংক্রমণ।
অনিদ্রা।
বংশগত কারণ।
স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন।
তৈলাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির সংস্পর্শে থাকা।
ত্বকে দীর্ঘসময় মেকআপ করে রাখা।
মেকআপ ব্যবহারের পর সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার না করা।
অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া।
যানবাহনের দূষণ।
ধূমপান।

ব্রণের রয়েছে নানা ধরন। যেমন—প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রণকে বলা হয় কমিডন। এটি হলে মুখে ব্ল্যাকহেডস বা দানার মতো হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে যে ব্রণ হয় তাকে বলা হয় পাস্টিউলার অ্যাকনি। এই ব্রণ একটু বড় ও ব্যথাযুক্ত এবং এর ভেতরে পুঁজ থাকে। আবার আরেক ধরনের ব্রণ হয় যাতে মুখ ভর্তি হয়ে থাকে ব্রণে। একে বলা হয় সিস্টিক অ্যাকনি। এটি অন্যান্য ব্রণের চেয়ে কিছুটা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। এই ব্রণগুলো আকারে তুলনামূলক বড়ো, ব্যথাযুক্ত ও লাল হয়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রণ নির্মূল হতেও বেশ সময় লাগে।

এছাড়া রয়েছে ট্রপিক্যাল অ্যাকনি, যা অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে হয়। এ ধরনের ব্রণ পিঠ ও ঊরুতে বেশি হতে দেখা যায়। আবার নারীদের মধ্যে কারো কারো প্রিমেন্সট্রুয়াল অ্যাকনি হতে দেখা যায়। এটি সাধারণত মাসিক শুরুর সপ্তাহখানেক আগে হয়। আবার কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ব্রণ হলে তাকে অ্যাকনি কসমেটিকা বলা হয়। বারবার সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কারের কারণেও ব্রণ হতে পারে। এই ব্রণকে বলা হয় অ্যাকনি ডিটারজিনেকস।

কারণ

বাবা অথবা মা যে কারও কৈশোরে ব্রণের ইতিহাস থাকলে সন্তানেরও ব্রণ দেখা দিতে পারে। বয়ঃসন্ধি পর্যায়ে শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে সেবামের মাত্রা বাড়ে এবং মুখ, পিঠ, বুক ইত্যাদিতে ব্রণ দেখা দেয়। ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি ব্রণ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। মানসিক চাপও ব্রণ হওয়ার কারণ হতে পারে। তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়স্ক নারীদের মধ্যেও অনেক সময় প্রসাধনীর পরিবর্তন এবং তা মানানসই না হওয়ার কারণে ব্রণ দেখা দেয়। তা ছাড়া হরমোনজনিত বিষয়ও ব্রণের জন্য দায়ী।

প্রতিরোধ

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন ব্রণ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে এবং শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়ার মাত্রা কমাতে হবে। ভাজাপোড়া খেলে ব্রণ বাড়ে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি পণ্যে ‘নন-কমেডোজেনিক’ লেখা আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। এটা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ব্রণ বাড়িয়ে দেয়, তাই চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
নখ দিয়ে ব্রণ খুঁটবেন না। নিজে নিজে চেপে পুঁজ বা রস বের করার চেষ্টা করবেন না। পিন দিয়েও ব্রণ খোঁচাবেন না। এতে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া এতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

ব্রণের চিকিৎসা

ব্রণ ভয়ংকর কোনো সমস্যা না। কিন্তু ব্রণ হলে খোঁটাখুঁটি করার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে মনে। শুরু হয় দুশ্চিন্তা। সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হতে দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বককে বলা হয় অ্যাকনিপ্রন স্কিন। তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে শুষ্ক ত্বকেও ব্রণ হতে পারে। তাই ব্রণ প্রতিরোধে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।

যখন অল্প ব্রণ দেখা দেয় তখনই সালফার, জিংক, বেনজোয়েল পার অক্সাইড, রেটিন বা অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত লোশন বা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু বেশি ব্রণ হলে সিস্টেমেটিক অ্যান্টিবায়োটিক বা সিস্টেমেটিক রেটিনয়েড থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। যখন এসব থেরাপি কাজ করে না তখন অ্যাকনি লেজার থেরাপি, ডায়মড পিলিং, লো লেভেল এলইডি লাইট এসব অ্যাসথেটিক থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। ব্রণ হলে দুশ্চিন্তা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে উর্পযুক্ত থেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা নিন। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন।

ব্রণ রোধে মেনে চলুন কিছু নিয়ম-কানুন

দিনে দুই থেকে তিনবার মাইল্ড বা হালকা ক্ষারযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।
ত্বক তৈলাক্ত হলে ওয়াটার বেজড ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে এবং ঘরে ফিরে ত্বক পরিষ্কার করুন।
নিজের ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনি, বালিশ আলাদা রাখুন।
মানসিক চাপ পরিহার করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
অতিরিক্ত রোদ ও শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন।
ব্রণে হাত ও নখ লাগাবেন না, খুঁটবেন না।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে দূর করুন।
মুখে পানির ঝাপটা দিন।
চুল খুশকিমুক্ত রাখুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

চোখ ওঠার সমস্যা সারাতে যা করবেন যা করবেন না
Prev Post চোখ ওঠার সমস্যা সারাতে যা করবেন যা করবেন না
বর্ষাকালে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
Next Post বর্ষাকালে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *