Search

দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • 0
  • 7 views

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এমন সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৭ জুলাই) সকালে সহিংসতায় আহতদের দেখতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর বিচার দেশবাসীর কাছে চাই। আন্দোলনের নামে এতোগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো এর দায়িত্ব্য কার? আহতদের চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা করবে সরকার।’

আহতদের চিকিৎসায় সরকার সব ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আহত তাদের সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করবে সরকার। পা হারানোদের জন্য কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করাসহ তাদের রোজগারের সুযোগ করে দেওয়া হবে।

সহিংসতার পুলিশের ওপর আঘাত করার সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, পুলিশের ওপর আঘাত, মানুষ মেরে ঝুলিয়ে রাখা এ কেমন রাজনীতি।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আন্দোলনের নামে এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো এর দায়িত্ব কার?’

তিনি দেশবাসীর কাছে নাশকতাকারীদের বিচার চান এবং বলেন, ‘দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে যখন একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম আজকে সেখানে দেখি একদিকে জ্বালাপোড়াও সব কিছু, ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সেবা দেয়। আমিতো কষ্ট লাঘব করেছি। যারা এইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে সেই কষ্টে আবার ফেলে দিল তাদের বিচার এদেশের মানুষকেই করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে, আর যেভাবে মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যারা মারা গিয়েছে আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ২০০৮ সাল আর ২০২৪ এর বাংলাদেশ তো এক না। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান তো উন্নত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি কত উপরে উঠে গিয়েছিল এবং এটা মনে হল, আর কিছুই না বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেয়া। এটা বোধহয় এর (সহিংসতা) পেছনের ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক।

তিনি বলেন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলে, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হল, এর দায়-দায়িত্ব কাদের? তাদের বিচার এই দেশের মানুষের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন বাংলাদেশকে একটা জায়গা নিয়ে আসলাম। আজকে সেখানে দেখি, আজকে একদিকে জ্বালাও-পোড়াও সব কিছু, ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেখানে।

জনগণের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মেট্রোরেলে মানুষ কত অল্প সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারত, আবার ফিরতে পারত। সেই স্টেশনগুলো পুড়িয়ে এখন ট্রাফিক জ্যাম, মানুষের কষ্ট। আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি। কিন্তু যারা এইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আবার কষ্টে ফেলে দিল, তাদের বিচার এদেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি খালি সকলের সহযোগিতা চাই। আমার কি এটাই অপরাধ যে, আমি মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য কাজ করেছি? আর সেই জায়গাগুলোতেই হামলা করতে হবে?

সাম্প্রতিক সংঘাতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব কার এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, কোটা তো আমি বাতিলই করে দিয়েছি। আমি আহ্বান করেছিলাম একটু ধৈর্য ধরো। হাই কোর্টে শুনানি হবে। না, তারপরেও এই আন্দোলন, আজকে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো। এর দায় দায়িত্ব কাদের? আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাব। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ, এদেশকে নিয়ে যেন আর কেউ চালাতে না পারে। আমি সকলের সাহায্য চাই।

নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, আর এভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারাবার ব্যথা কত কষ্টের।

তিনি বলেন, (স্বজন হারানোর) কষ্ট বুকে নিয়েই তো ফিরে এসেছি এদেশের মানুষের জন্য। এখানে আমার তো কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি তো ছেলেমেয়ের জন্যও কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া, নিজেরাই চাকরি করেছে, নিজেরাই লেখাপড়া করেছে, আমি কতটুকু করতে পেরেছি? কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আজকে অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান, সবই তো করে দিচ্ছিলাম। যখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি তখনই এই তাণ্ডব করে যে জায়গাগুলোতে মানুষের সেবা, সেই জায়গাগুতেই আঘাত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আহত তাদের সকলের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে আমরা করে দেব, করে দিচ্ছি।

যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে তাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা পা হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে, আমরা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দেব। যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলতে পারে, নিজের কাজ করতে পারে।

বিভিন্ন দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন আর তার ফলাফল আজকে এই অবস্থা। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না। কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সম্পূর্ণ দাবিই মেনে নিয়েছি। একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা। এর ফল আজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সব দিকে ছারখার। আর আজকে কত মানুষ জীবন হারাল। কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।

সকালে পঙ্গু হাসপাতালে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

শেখ হাসিনা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলেন।

সেখানে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

আহতদের অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং চোখের পানি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ভাঙা মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে স্থাপনায় হামলার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে যান তিনি। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে সংঘর্ষের সময় আহতদের চিকিৎসার জন্য যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী
First Post দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী
নুরুল হক নুরকে এক নেতা চার লাখ টাকা দেন : ডিবি হারুন
Next Post নুরুল হক নুরকে এক নেতা চার লাখ টাকা দেন : ডিবি হারুন

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *