আজকাল শিশু থেকে বুড়ো সকল মানুষের মধ্যে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার বিভিন্ন সমস্যাসহ শরীরে ওজন বাড়ায়। তাই ওজন কমাতে ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু ভেষজ রাখতে পারেন। এসব ভেষজ ওজন কমাতে সাহায্য করে। এগুলোতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে। এসব ভেষজ রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর ভেষজ গ্রহন করার সহজ মাধ্যম হল ভেষজ চা।
ইদানীং বিভিন্ন প্রকার ভেষজ চায়ের প্রতিও মানুষের আসক্তি বাড়ছে। কারণ, এসব চা-য়ে শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। আবার স্বাদ বদলও হয়। সেই সঙ্গে শরীরকে বিষমুক্ত করে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতেও বিভিন্ন প্রকার ভেষজ চায়ের তুলনা নেই।
শরীরকে ডিটক্স করতে এবং ওজন কমাতে ভেষজ চা একটি উৎকৃষ্ট পানীয়। ভেষজ চা শুধু শরীরকেই ভালো রাখে না, এই চা মানসিক প্রশান্তি দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভেষজ চা বিষণ্নতা রোধ করে, ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায় এবং হৃদরোগ ও ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমায়।
তবে ওজন কমাতে ভেষজ চা একটু বেশিই খুবই কার্যকর। ভেষজ চা একটি লো-ক্যালরি পানীয়, যা আপনাকে পাতলা হতে সাহায্য করবে এবং এর স্থূলতা বিরোধী গুণাগুণ আপনার ক্ষুধা কমাবে এবং শরীরে নতুন ফ্যাট সেল উৎপাদন বন্ধ করবে।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে থাকা কিছু রাসায়নিক পদার্থ শরীরের চর্বি শোষণে বাঁধা দিতে পারে। তাই ওজন কমানোর কর্মসূচিতে দৈনিক ভেষজ চা রাখা উচিত সবারই। তাহলে আর দেরি না করে তেমনই কিছু ভেষজ চা সম্পর্কে না জানলেই নয়।
অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে কাজের ফাঁকে কিংবা অবসর কাটাতে এক কাপ চা না হলে ঠিক জমে না। মানসিক চাপ হোক বা কাজের চাপ, বিধ্বস্ত লাগলেই চায়ের প্রতি ভরসা করেন অনেকে। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ চা পান করেন। বেশিরভাগের পছন্দ দুধ চা নয়তো রং চা। কিন্তু আমাদের আলোচনা ভেষজ চা। তাহলে আর দেরি না করে তেমনই কিছু ভেষজ চা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই
দারুচিনি চা
শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এই পানীয়টি আপনাকে খেতেই হবে। একটি পাত্রে পানি গরম করে দারুচিনি গুঁড়া, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন। তারপর এই চা ছেঁকে খান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে বাঁচাতে সহায়তা করে। ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা হলে তা থেকেও আরাম মিলবে।
পুদিনা পাতার চা
পুদিনা পাতার চা একটি সুগন্ধি চা, যা অনেকের মতে গ্রিন টি’র চেয়েও বেশি উপকারী। এতে আছে অনেক কম ক্যালরি, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এছাড়া পুদিনা চা ক্ষুধা কমায়, খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা দূর করে এবং হজমের উন্নয়ন করে।
পানি গরম করে তাতে কুচি কুচি করে কয়েকটা পুদিনা পাতা কেটে মিনিট ১৫ ঢাকা দিয়ে রাখুন। পাতা কেটে দিলে পুদিনার গন্ধটা পুরোটাই পাবেন। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এড়াতেও খেতে পারেন পুদিনা চা। এই চা খেলে নিমেষেই দূর হয়ে যাবে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি। একটানা কাজ করার জন্য মনোসংযোগ বাড়াতেও সহায়তা করে এই চা।
তুলসী চা
আয়ুর্বেদে তুলসীকে একটি ঔষধি গাছ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সবচেয়ে জেদি পেটের চর্বিও বেশিক্ষণ তুলসীর সামনে দাঁড়াতে পারবে না। একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে নিন। তারপর মধু ও লেবু মিশিয়ে নিলেই তৈরি তুলসী চা। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিয়মিত তুলসী চা খান, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে শুধু যে হার্ট ভালো থাকবে তা নয়, তার সঙ্গে এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ওবেসিটি কাটাতে এই চা দারুণ কাজ করে। তাই এই চায়ের অন্য নাম স্লিমিং টি। এই চা ফ্লাভোনয়েড, ক্যাথেচিন ও এপিগ্যালোক্যাথেচিন সমৃদ্ধ হওয়ায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত পলিফেনলস নামক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আদা-লেবু চা
সর্দি কাশি কমাতে অনেক চিকিৎসক আদা ও লেবু মিশিয়ে চা খাওয়ার কথা বলেন। তবে এই চা বদহজমও কমায়। একইসঙ্গে, তাড়াতাড়ি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। আদা চা পরিপাকতন্ত্র ঠিক রেখে চটজলদি ওজন কমাতে বেশ কাজ দেয়।
চিনি ছাড়া রং চা
নানারকম বিশেষ চা যদি না খেতে পারেন, তাহলেও চিন্তা নেই। চিনি ছাড়া রং চা-ই খেতে পারেন নিয়মিত। এটিও আপনাকে দারুণ ফল দেবে। মেদ যতই হোক, চটজলদি ওজন কমাতে এই চা ভালো কাজ দেয়। সঙ্গে সারাদিনের কাজের ক্লান্তি তো দূর করবেই।
জবা ফুলের চা
জবা ফুলের নির্যাস দিয়েও তৈরি করা যায় বিশেষ ধরনের চা। এই চা নিয়মিত খেলে রক্তপ্রবাহ ভালো থাকে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও এটি ফ্যাট কমায় ও লিভার ভালো রাখে।
ওলং চা
ওলং চা একটি চাইনিজ ভেষজ চা। ওজন কমাতে বিশেষ কার্যকরী ওলং চা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ওলং চা পান করলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্ষুধা কমাতেও সাহায্য করে। স্থূলতাও কমাতে পারে এই চা।