নিজস্ব প্রতিবেদক :
কবিগুরুর কলমে সৃষ্টি কবিতা ‘আষাঢ়’- এর লাইনে বর্ষার অঝর ধারার বর্ণনা ফুটে ওঠে। অনবরত মেঘগলা আকাশের নেমে আসা ধারা সিক্ত করে মাটিতে থাকা সবকিছু। বর্ষার সময়টা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশ অনেকটা আলাদা। এই সময় রোদ-বৃষ্টিরপাল্লা চলে। ক্ষণে মেঘ, ক্ষণে বৃষ্টি! এইজন্য কখনো ভ্যাপসা গরম, কখনো বা স্যাঁতস্যাতে ভাব। আর বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই বর্ষার সময় সুস্থ থাকতে একটু সাবধান থাকতেই হয়।
আমাদের সুস্থতার অনেকাংশই নির্ভর করে খাদ্যতালিকার উপর। আমাদের গ্রহণ করা খাবারের দ্বারা উৎপন্ন শক্তিতেই দেহ চলে। তাই বর্ষার সময় খাবারের ব্যাপারেও সতর্ক হওয়া উচিত। অপ্রত্যাশিত রোগ বালাই এড়াতে বর্ষার মৌসুমে যেসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
শাকজাতীয় সবজি
এটা কী ভাবা যায় যে, কোনো পুষ্টিবিশেষজ্ঞ শাকসবজি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেবেন? আশ্চর্যজনক মনে হলেও, এটা সত্য। শাকসবজি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে পরিচিত হলেও, বর্ষায় এই খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের। ২০১৫ সালে অ্যাপ্লাইড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মাইক্রোবায়োলজিসহ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ শাকসবজি বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের আবাসস্থল হয়ে ওঠে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষায় পরিবেশগত কারণে সবুজপাতাবিশিষ্ট শাকসবজিতে পোকামাকড় ও জীবাণু বেশি আশ্রয় নেয়, তাই এই সময় শাকজাতীয় সবজি এড়িয়ে চলাই ভালো। আর যদি খেতেই হয় তাহলে ভালোভাবে ভাঁপ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। তাহলে জীবাণু মরে যাবে। তরকারি লবণপানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। বিশেষত পাতাসমৃদ্ধ তরকারি পানিতে যত্নসহকারে ধুয়ে নিতে হবে। কেননা এসবে অনেক জীবাণু, ময়লা থেকে যায়। তাই রান্নার আগে এগুলো ধুয়ে ও ফুটিয়ে নিতে হবে।
বর্ষার মৌসুমে রাস্তার খাবার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। প্রায় সব দোকানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এইসব খাবার বানানো হয়। বর্ষার কাদামাটির কারণে রাস্তা এবং আশেপাশের এলাকা আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। এমনকি বাইরের দোকান থেকে কাটা ফলও খাওয়া উচিত নয়।
সামুদ্রিক খাবার
এ মৌসুমে পানিবাহিত রোগ বাড়ে। তাই বর্ষায় সামুদ্রিক খাবার সহজেই দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। পুড পয়জনিং প্রতিরোধে সাগরের মাছ, চিংড়ি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলুন।
দুগ্ধজাত পণ্য
দুগ্ধজাত খাদ্য-পণ্য, যেমন-দুধ, দই এবং পনির আর্দ্র। আবহাওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুধের তৈরি বাসি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বা ঘরে তৈরি হলে ব্যবহার করতে পারেন।
আমিষ
স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে মাছ এবং বিশেষ করে মাংস দ্রুত পচে যেতে পারে। তাই আমিষজাতীয় খাবার খেলে অবশ্যই সদ্য রান্না করা খাবার খাবেন। বাসি খাবার খেলে অসুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভাজাপোড়া
বর্ষায় বেশি ভাজাভুজি খাবার না খাওয়াই ভাল। কারণ, আর্দ্র আবহাওয়ায় আমাদের হজম ক্ষমতা কমে যায়। তাই এই সময়ে ভাজাপোড়া খাবার যেমন- সমুচা, জিলাপি, পুরি এবং অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
মাশরুম
বর্ষাকালে এই খাবার কম খাওয়াই ভাল। কারণ এসময় মাশরুমে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বর্ষায় মাশরুম খেলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলেও বর্ষাকালে মাশরুম এড়িয়ে চলা ভালো। মাশরুম খেতে যদি খুব ইচ্ছা করে, তবে রাঁধার আগে ভালো করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। পারলে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন।
রাস্তার খাবার
রাস্তার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। রাস্তায় কাটা ফল বা নানা রকমের খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবেন না। এসব খাবার খোলা বাতাসে থাকে, আর তাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাস্তার খাবার খেলে খাদ্যবাহিত রোহ, যেমন—ফুড পয়জেনিং, ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েড জ্বর হতে পারে।
কাঁচা খাবার
বর্ষার সময় কাঁচা খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এই মৌসুমে মেটাবলিজম বেশ ধীরে কাজ করে। যার ফলে খাবার দেরি করে হজম হয়। যদি তাজা খাবার খাওয়ার ডায়েট অনুসরণ করেন থাকেন তাহলে সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো।