নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বুধবার (১০ জুলাই) সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদসহ প্রমুখ।
তিনি বলেন, চার দফা নয়, আমাদের এখন দাবি একটা। তা হলো- সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যুনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। এ ব্লকেডের অন্তর্ভুক্ত হবে সড়ক ও রেলপথ।
সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের সারাদেশের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাননের সামনে ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবরোধ করবেন।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা কোটার বিরোধিতা করছি না। আমরা নূন্যতম মাত্রায় কোটার পক্ষে আন্দোলন করছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই আমাদের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কি না সেটা নিয়ে আলোচনা করছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলছি যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রাখি।
কোটা কাদের জন্যে হতে পারে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কোটা প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্যে থাকতে পারে।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলনটি চালিয়ে যাচ্ছি এটি কোটা বাতিলের আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন হচ্ছে বাস্তবতার আলোকে ন্যায্যতার পর্যায়ে কোটা সংস্কার করা। আমরা বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধী কিনা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার বিরোধিতা করছি না, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের কোটার বিরোধিতা করছি।
ন্যূনতম কোটা রাখা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি কোটা শুধু প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আমরা ৫ পার্সেন্ট কোটা যৌক্তিক বলে বিবেচনা করছি। আমাদের মূল দাবি হলো নির্বাহী বিভাগের কাছে।
সকালে দুই শিক্ষার্থীর দায়ের করা রিটের বিষয়ে সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, এটি আমাদের আন্দোলনের কোনও অংশ নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজেদের ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গা থেকে এই রিট করেছেন। আমরা তাদের এই রিট সমর্থন করছি। তবে এটি আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
রিটের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, রিটের রায় যাই হোক না কেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে তো কোনও কথাই নেই, আন্দোলন চলমান থাকবে। আর যদি ইতিবাচক আসে, যদি আমাদের পরিপত্র বা লিখিত কোনও ডকুমেন্টের মাধ্যমে আশ্বস্ত করা হয় যে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে, তবে আমরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাবো আনন্দ মিছিল করতে করতে।
আন্দোলনকারীরা জানান, এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। সরকারের উচ্চ মহল থেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লিখিত কোনো আশ্বাস এলে তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
২০১৮ সালের অক্টোবরে কোটাবিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে সরকার পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন পরিপত্রটি বাতিল করে দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এই রায়ের পর ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে জোরালো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে দুই দিন ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাজপথ অবরোধ করায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের।