Search

ভ্রু ঘন করার উপায়

  • 0
  • 3 views

অনেক নারীই ঘন ভ্রু বেশ পছন্দ করে থাকেন। ঘন এবং চিকন ভ্রু অভিব্যক্তি আরো স্পষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকেরই ভ্রু বেশ পাতলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সাজগোজ কিংবা মেকআপে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। বহু বছর প্লাকিং, থ্রেডিং কিংবা ওয়েক্সিং এর পর হয়তো কিছুটা আশাপ্রদ ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু এতে হয়তো আপনার চুলের বেড়ে ওঠায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত ভ্রুতে প্রায়ই ছোপ ছোপ খালি জায়গা তৈরি হতে পারে।

ভ্রু যে কেবল সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে কাজ করে এমনটা নয়, চোখে ঘাম পড়া এড়াতেও ভ্রু ভূমিকা রাখে। এছাড়াও চোখের কোটরকে সুরক্ষিত রাখতে এবং মুখের অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতেও এর ভূমিকা কম নয়।

ভ্রু অতিরিক্ত মোটা হলে পার্লারে গিয়ে পছন্দ মতো আকৃতি দেওয়া যায়। কিন্তু যাদের ভ্রু পাতলা তারা কী করবেন? পাতলা ভ্রুতে পছন্দ মতো আকৃতি দেওয়ার বেশ কঠিন। প্রাকৃতিক উপায়েই পাতলা ভ্রুর লোম ঘন করতে পারেন।

ভ্রু পাতলা হওয়ার কারণ :

ভ্রু চিকন বা পাতলা হওয়ার নানান কারণ রয়েছে। ফার্মইজি ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অনুজা বোধার বলেন, অনেকের ভ্রু প্রাকৃতিকভাবেই পাতলা, কেউ-বা খুব বেশি প্লাকড করেন অথবা অনেকের ক্ষেত্রে ভ্রুয়ের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে যা ‘ম্যাডারসিস’ নামে পরিচিত। এই রোগ ভ্রু ও চোখের পাপড়ি পড়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে থাকে। এটা নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে হয়ে থাকে। যেমন-

সংক্রামক রোগ: কুষ্ঠ, সিফিলিস, হার্পিসস সংক্রমণ, এইচআইভি, চুলের ফলিকলের সংক্রমণ ইত্যাদি।

 

চর্মরোগ: ডার্মাটাইটিস (অটোপিক, সেবোরিয়েক, কন্টাক্ট ও নিউরো টাইপস) সিরোসিস, চুল ও অঙ্গের সংযোগ স্থানের সংক্রমণ।

 

চোখের রোগ: চোখের পাতায় নানান রকম সংক্রমণ।

 

পুষ্টির সমস্যা: জিংক ও লৌহের ঘাটতি, হাইপোপ্রোটেনিমিয়া বা রক্তে প্রোটিন কমে যাওয়া এবং বায়োটিন বা ভিটামিন বি ৭’য়ের ঘাটতি।

 

নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কোলেস্টেরল, থাইরয়েড অথবা রক্ত জমাট বাঁধা দূর করতে ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ, নায়াসিন, ভ্যালপরিক অ্যাসিড ইত্যাদি।

 

শারীরিক সমস্যা: হাইপার থাইরয়েডিজম, হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম, হাইপো থাইরয়েডিয়াম, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি।

 

ট্রমা অথবা আঘাত: রেডিয়েশন বা কেমিক্যালের সংস্পর্শের ফলে আহত হওয়া বা কোকেনের প্রভাব।

 

অন্যান্য: দাঁতের চিকিৎসার পরে, ‘ট্রাইকোডিসপ্লেসিয়া’ নামক এক ধরনের চর্মরোগ, ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি ইত্যাদি।

 

ভ্রু ঘন করার ঘরোয়া উপায়

বিভিন্ন ধরনের তেল : জলপাই, ক্যাস্টর, বাদাম এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ভ্রুতে মালিশ করতে পারেন। এই প্রতিটি তেলেই রয়েছে ভিটামিন ই, যা ময়েশ্চারের কাজ করবে। এমনকি শুধু ক্যাস্টর অয়েল ভ্রুতে মালিশ করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই সেটি ঘন হয়ে উঠবে। চাইলে চোখের পাপড়িতেও লাগাতে পারেন এই তেল। প্রতি রাতে কটন বাডে অল্প তেল নিয়ে লাগিয়ে রাখুন। সকালে উঠেই ধুয়ে ফেলুন।

 

পেপারমিন্ট বা পুদিনার তেল: গবেষণায় দেখা গেছে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর মাধ্যমে ফলিকল উজ্জীবিত করে চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে পুদিনার তেল। এতে আছে চুল পড়া রোধ করার ক্ষমতা। আর নিরাময়কারী উপাদান। ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে পুদিনার তেল ব্যবহার করতে চাইলে তুলায় সামান্য পরিমাণ তেল নিয়ে গোলাকার ভাবে ভ্রুয়ের ওপর মালিশ করতে হবে। রাতে মেখে পরদিন সকালবেলা ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

 

অ্যালো ভেরা: চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এতে আছে চুল ও ফলিকল মজবুত করার ক্ষমতা। বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভ্রু ঘন করতেও এর ব্যবহার রয়েছে। একটি তাজা অ্যালো ভেরার পাতা কেটে তার জেল আলাদা করে নিতে হবে। আর সাথে সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে ভ্রুর ওপর ব্যবহার করতে হবে। শুষে নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে ঘন ভ্রু পাওয়া যায়।

 

পেঁয়াজের রস: এতে আছে নানান খনিজ উপাদান, প্রধানত লৌহ যা ফলিকলে অক্সিজেন যোগায়। ঘন ভ্রু পেতে পেঁয়াজের রসের সাথে মধু ব্যবহার করে সারারাত রেখে দিতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে দ্রুতই ঘন কালো মোটা ভ্রু পাওয়া সম্ভব। যদিও এসব ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রচলিত। তবে অনেক সময় কার্যকর নাও হতে পারে। ভালো ফলাফল পেতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

 

ডিম: ডিমে কেরাটিন নামক একটি উপাদান আছে এবং ডিমের কুসুমে বায়োটিন নামক একটি মূল্যবান উপাদান পাওয়া যাবে। ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করলে দ্রুতই আপনার ভ্রু ঘন হতে শুরু করবে।

 

পেট্রোলিয়াম জেলি: শুধু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারেই সুফল আশা করা বোকামো। ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখাও জরুরি। পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত দুই থেকে তিনবার পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে আপনার ভ্রু ঘন হয়ে উঠবে।

 

কৃত্রিম উপায়ে ঘন ভ্রু:

১. কাজল বা মাসকারা দিয়ে ভ্রু আঁকা ছাড়াও বাজারে আইব্রো ফিলার পাওয়া যায়। এটি একধরনের কাজল বা আই পেনসিলের মতোই। ভ্রুয়ের প্রকৃত রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফিলারে বেছে নিন। ফিলার কীট ছাড়াও ছোট ব্রাশে একটু গাড় রঙের কালার শেড নিয়ে ভ্রুতে লাগতে পারেন।

২. গাঢ় শেডের ডাস্ট পাউডার দিয়েও ভ্রু এঁকে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে গাঢ় বাদামি কিংবা কালো রংই ভালো মানায়। বাজারে শুধু আইব্রো আঁকার মেকআপ কীট পাওয়া যায়।

৩. ভ্রু জোড়া আঁকার ক্ষেত্রে শুরুটা করুন একদিক থেকে। যাদের ভ্রু অতিরিক্ত পাতলা, তারা প্রথমেই নির্দিষ্ট আকারে ভ্রু হালকা করে এঁকে নিতে পারেন। এরপর ডাস্ট পাউডার কিংবা আইপেনসিল দিয়ে পুরো স্থানটা ভরাট করে ফেলুন। সব শেষে কটন বাড দিয়ে ভ্রুয়ের চারপাশ একটু মুছে নিন, যাতে কালো রং ছড়িয়ে না যায়।

 

কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখুন :

* বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, অনেক সময় ভ্রুয়ের ত্বকে ঘাম, মৃত কোষ জমে যায়। অনেকের আবার ভ্রুয়ের কাছাকাছি ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নতুন ভ্রু গজাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নরম টুথব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে ভ্রু জোড়া আঁচড়ে নিতে পারেন। ফলে মৃত কোষ সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

* ভ্রু সম্পূর্ণ গজানো ছাড়া প্লাক না করাই ভালো। অন্তত মাসে একবার ভ্রু প্লাক করার পরামর্শ দেন শারমিন কচি। তিনি জানান, এতে ভ্রুয়ের আকৃতি নষ্ট হয় না। অবশ্য অনেকের ভ্রু দ্রুত গজিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঘরে বসে চিমটা দিয়ে নিজেই কিছুটা প্লাক করে রাখতে পারেন। পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ ভ্রু গজালে পারলারে প্লাক করে নিন।

* ভ্রু প্লাক করার সময়ে নিজ চেহারার আকৃতি, ভ্রুয়ের ঘনত্ব লক্ষ রাখুন। অনেকেই ভি আকৃতির ভ্রু রাখেন। আবার অনেকেই সেমি-সার্কেল আকারে। কেউ আবার ভ্রুর মাঝখানের অংশটুকু রেখে দেন। নিজেই লক্ষ করুন আপনাকে কোন আকৃতিতে বেশি মানাচ্ছে। তবে ভ্রুয়ের ক্ষেত্রে নিজের প্রকৃত আকৃতিটাই রাখার পরামর্শ দেন শারমিন কচি। কেননা এতে ভ্রুর একটা নির্দিষ্ট আকৃতি বজায় থাকে।

* প্লাক করার পর অনেকেরই অ্যালার্জি, র‌্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। সেসব স্থানে বরফের টুকরো লাগাতে পারেন। প্লাক করার সুতা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। নয়তো সুতায় জমে থাকা ধুলোবালি থেকেই এই র‌্যাশ এবং অ্যালার্জি হতে পারে।

* অনেক সময় মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি কিংবা ফাঙ্গাস থেকেও ভ্রু কমে যায়। এমনকি ভ্রু এবং চোখের পাপড়িতেও খুশকি জন্মাতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগকে সাধারণত অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা বলা হয়। এ জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

* প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরলজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় জিংক ও ক্যালসিয়ামও রাখা চাই।

খেজুরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
Prev Post খেজুরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
শসা খেলে মিলবে যেসব উপকারিতা
Next Post শসা খেলে মিলবে যেসব উপকারিতা

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *