লাইফস্টাইল ডেস্ক :
গরমে ঠান্ডা পানির বিকল্প নেই। কিন্তু এই যে আপনি বাড়িতে ফিরেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিচ্ছেন, এটি কি স্বাস্থ্যকর? ফ্রিজের ঠান্ডা পানি যতটা সম্ভব কম খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এর বদলে বাড়িতে রাখতে পারেন মাটির কলস বা ঘড়া। যদিও এর ব্যবহার অনেকটা কমেছে। কিন্তু মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করা বেশি স্বাস্থ্যকর।
মাটির কলসের পানি পান করার- প্রাচীন কাল হতেই বলা হয়েছে যে শরীরের জন্য ঠাণ্ডা পানি ক্ষতিকর এবং তারা কঠিনভাবে নিয়ম অনুসরণ করতেন, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করতেন।একান্ত বিপদে না পড়লে, তারা ঝর্ণা বা পুকুরের ঠাণ্ডা পানি কখনই সরাসরি পান করতেন না, পানিকে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে, তাপমাত্রা কমিয়ে তারপর পান করতেন।ঠাণ্ডা পানি পান করলে যে কেবল পাকস্থলীর কার্যক্ষমতায় ত্রুটি দেখা দেয় তা নয়, এটি হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
বর্তমানে অনেকেই মাটির কলসি ব্যবহারের কথা ভুলে গেছেন। একটা সময় যে এমন কলসিতে পানি রেখেই ঠান্ডা করে খাওয়া হতো, সেই স্মৃতিও মলিন হতে চলেছে। এদিকে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে, হজমে গোলমাল বাঁধাতে পারে আবার এটি তৃষ্ণা নিবারণেও খুব একটা সহায়ক না। সব দিক বিবেচনা করে মাটির কলসিই ফিরিয়ে আনুন আবার। জেনে নিন মাটির পাত্র বা কলসিতে রাখা পানি আপনাকে কীভাবে উপকার করবে-
মেটাবোলিজম ঠিক রাখে
আমাদের শরীরের মেটাবলিজম সঠিক রাখতে কাজ করে মাটির কলসি। এর কারণ হলো মাটির পাত্রে একধরনের ইলেকট্রন থাকে যেটি শরীরের জন্য উপকারী। যে কারণে মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করলে শরীরে মেটাবলিক রেট বাড়তে থাকে।
পুষ্টির সংরক্ষণ
প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্রে পানি রাখলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা দূষিত পদার্থ মিস্যে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে মাটির পাত্রে এই ভয় নেই। পানির প্রাকৃতিক গঠন অক্ষত রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং খনিজ সংরক্ষণ করে মাটির পাত্র।
হজম ভালো হয়
মাটির পাত্রে সঞ্চিত পানি হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্যের উন্নতি করে বলে বিশ্বাস করা হয়। মাটির পাত্রের পানির ক্ষারীয় প্রকৃতি পাকস্থলীর অম্লতা কমায় ও বদহজম এবং বুকজ্বালার উপসর্গগুলো উপশম করে।
শরীরে আর্দ্রতা ধরে রাখে
গরমে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা পানি পাওয়ার জন্য মাটির কলসির বিকল্প নেই। এটি এসময় শরীরের পক্ষে খুবই সহায়ক। এই পানি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কাজ করে। ফলে শরীর থাকে অনেকটাই সতেজ। এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক থাকে না। যে কারণে এই পানি পানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও নেই।
গ্যাস-অম্লতার ওষুধ
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ও লেখক ডক্টর আবরার মুলতানির মতে, মাটির পাত্রের পানি ওষুধের মতো কাজ করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে জলকে বিশুদ্ধ করে। আপনি যদি পাত্রটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তবে এটি যে কোনও ওয়াটার ফিল্টারের চেয়ে বেশি উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসক মাটির পাত্রে পানি রেখে খাওয়াকে ওষুধ হিসেবে মনে করেন। কারণ, এই জলের প্রকৃতি ক্ষারীয়, অর্থাৎ এই জল পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে গ্যাস-অম্লতার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে
গরমে হিট স্ট্রোক খুবই বিপজ্জনক। যার থেকে জ্বর, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়ে যায়। গরমের সময় রোদ থেকে এসে মাটির পাত্রের পানি খেলে সব ক্লান্তি কমে যায়। আসলে মাটির পাত্রের জলে কিছু খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য় করে। তাই হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচায়
গরমে রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আপনাকে সাহায্য করবে মাটির পাত্রে রাখা ঠান্ডা পানি। এটি সান স্ট্রোক থেকে সুরক্ষা দেবে। মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করলে শরীরের গরম অনেকটােই কমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়।
টক্সিন দূর করে
শরীরে টক্সিক কেমিক্যালের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে মাটির পাত্রে রাখা পানি। লোহা, স্টিল কিংবা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্রে পানি রাখলে সেখান থেকে নানা ধরনের দূষিত পদার্থ ঢুকতে পারে শরীরে। তবে মাটির পাত্রে পানি রাখলে সেটি সম্ভব নয়। শরীরের অ্যাসিড দূর করতেও কাজ করে এটি।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় সমাধান
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করতে পারেন। এটি বেশ ভালো কাজ করে। যারা একটু বয়স্ক, তারা পানি পানের ক্ষেত্রে মাটির পাত্র ব্যবহার করুন। এতে শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান মিলবে।