রাজধানীর বাইরেও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর বেশিরভাগ ঢাকার বাইরে থেকে আসায় বাড়ছে উদ্বেগ। চিকিৎসকদের আশঙ্কা এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে।
অসহনীয় খরতাপ শেষে সম্প্রতি দেশজুড়ে দেখা মিলেছে বৃষ্টির। ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী বৃষ্টির হার বাড়ায় জনজীবন ও প্রকৃতিতে স্বস্তি মিললেও একইসঙ্গে বাড়ছে মশার উৎপাত। বৃষ্টিজনিত জমে থাকা পানি পরিণত হয়েছে এডিসের উর্বর প্রজননক্ষেত্রে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত প্রাক বর্ষা এডিস সার্ভেতে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। যেখানে ১৪.৬৮ শতাংশ বাসাবাড়িতে মেলে এডিসের লার্ভা। গত বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৪.০৩ শতাংশ। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় বাসাবাড়িতে এডিসের ঘনত্ব বেড়েছে সাড়ে তিন গুণের বেশি।
মাঠের এই চিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও আসতে শুরু করেছে রোগী, যাদের অধিকাংশই জটিল অবস্থায় আসছেন ঢাকায়।
চলতি বর্ষায় ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়বে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত তথ্য পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ। তবে রোগী বাড়ার আগেই শহর-গ্রাম সর্বত্রই মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসের আহ্বান তাদের।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘তীব্র গরমের মধ্যেও হাসাপাতালে ডেঙ্গু রোগী ছিল। সুতরাং বৃষ্টির পর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুধু ঢাকায় নয়, গ্রামেও রয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, কিছু কিছু গ্রামে স্মল স্কেলে প্রজেক্ট নিতে হবে। একেকটা গ্রামে একেক ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মধ্যে দেখতে হবে কোনটা কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী। তারপর সেটা ধরে আগাতে হবে। আমাদের উচিত, গ্রামগুলোর জন্য আগামী ২০ বছরের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করা। ২০ বছর শেষে গিয়ে যেন আমরা আবার এটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।
চলতি বছর এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। তবে জটিলতা থাকলে অবহেলার সুযোগ নেই। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশেরই জটিলতা থাকলেও হাসপাতালে আসতে দেরি করায় ঘটেছে বিপর্যয়।