Search

মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

  • 0
  • 3 views

লাইফস্টাইল ডেস্ক : 

ব্যাঙের ছাতা বলেই পরিচিত মাশরুম। এ কারণে হয়তো অনেকেই খেতে চান না। তবে যারা এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেন, তারা ঠিকই খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা এর উপকারিতা সম্পর্কে অল্প কিছু জানলেও এটি কীভাবে খেতে হয় তা জানেন না।

সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মাশরুমের পুষ্টিগুণ এবং এটি খাওয়ার উপায় সম্পর্কে কথা বলেছেন রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।

মাশরুম হচ্ছে ছত্রাক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার প্রজাতির মাশরুম পাওয়া গেছে। তবে সব ধরনের মাশরুম কিন্তু খাওয়া যায় না। বনে জঙ্গলে পাওয়া মাশরুম বিষাক্ত। এ ক্ষেত্রে অর্গানিক বা নিজেদের চাষ করা মাশরুম খাওয়া যেতে পারে। বাটান, ওয়েস্টার ও পোর্টেবেলো ধরনের মাশরুম রয়েছে, যা খুবই জনপ্রিয়। আর যেখানে সেখানে পাওয়া নয়, নিজে চাষ বা অর্গানিক মাশরুম খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ

আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই মাশরুমের পুষ্টিগুণ সেগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ সহ শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই সহায়ক। মাশরুমে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডের মধ্যে প্রত্যেকটিই বিদ্যমান। প্রোটিনে ভরপুর মাশরুমে কোন প্রকার ক্ষতিকর চর্বি না থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে মেদ-ভূড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি একশ গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন ২৫-৩৫ গ্রাম, ভিটামিন ৫৭-৬০ গ্রাম ও ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, শর্করা, উপকারী চর্বি ৪-৬ গ্রাম পাওয়া যায়। এতে আঁশের পরিমাণও খুবই সন্তোষজনক ও এর পরিমাণ প্রায় ১০-২৮%। এই পরিমাণটি অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশী। শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকায় মাশরুম দেহকে সুরক্ষিত রাখতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মাশরুমের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মারাত্মক কিছু রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ

সেলেনিয়াম শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম পাওয়া যায়। এটি শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে।

ওজন কমাতে কার্যকর

মাশরুমে খুব কম ক্যালোরি রয়েছে। ৫টি সাদা মাশরুমে মাত্র ২০ ক্যালোরি রয়েছে। মাশরুম খেলে পেট ভরা থাকে এবং দ্রুত খিদে পায় না। ফলে জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা সম্ভব।

নানাভাবে খেতে পারেন

পুষ্টিবিদ বলেছেন যে, আপনার খাদ্যতালিকায় অনেক ধরনের জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মাশরুম একটি সহজলভ্য সবজি যা বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা যায় এবং এর পুষ্টিগুণ গ্রহণ করা যায়।

ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস

ভিটামিন ডি শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অভাব অনেক রোগের কারণ হয়। ভিটামিন ডি খুব কম শাকসবজিতে পাওয়া যায় এবং মাশরুম তার মধ্যে একটি। প্রতিদিন মাশরুম খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-র ঘাটটি পূরণ হয়।

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। যা, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো রোগের কারণ হতে পারে। এগুলি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং আপনাকে বার্ধক্যজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। সেলেনিয়াম একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাশরুমে প্রচুর। প্রকৃতপক্ষে, তারা খনিজ উৎপাদনের আইলের সেরা উৎস।

কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

মাশরুমে কোলেস্টরেল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাষ্টটিন, এনটাডেনিন, কিটিন এবং ভিটামিন বি, সি ও ডি থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এতে উচ্চমাত্রার আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। এছাড়া এতে সোডিয়ামের পরিমাণও খুবই কম থাকে যার ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ হৃদপিণ্ডের অন্যান্য কাজেও সহায়তা করে থাকে।

হার্টের জন্য ভালো

মাশরুমে কিছু থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতিরিক্তভাবে, এগুলিতে পুষ্টি এবং উদ্ভিদের উপাদান রয়েছে যা, কোষগুলিকে রক্তনালীর দেয়ালে লেগে থাকা এবং ফলক জমা করা বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। পরিবর্তে, এটি ভালো রক্তচাপ এবং সঞ্চালন প্রচার করে, যা হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

মাংসের একটি দুর্দান্ত কম-ক্যালোরি, কম চর্বিযুক্ত বিকল্প হলো মাশরুম। এগুলোতে ক্যালোরি কম এবং জলের পরিমাণ বেশি। মাশরুমে উচ্চ পেকটিন ঘনত্ব, এগুলোকে দ্রবণীয় ফাইবারের একটি ভালো উৎস করে তোলে। যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং এবং আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণতা অনুভব করে। এগুলোতে প্রোটিনও বেশি এবং চর্বি কম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

বিটা-গ্লুকান নামে পরিচিত এক ধরনের ফাইবার, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে পাওয়া গেছে, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। গবেষকরা বিটা-গ্লুকানকে সম্ভাব্য ক্যান্সার এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসা হিসেবে দেখেছেন। অতিরিক্তভাবে, সেলেনিয়াম, যা মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে, সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং সর্দি এবং ফ্লুর প্রতিরোধ বাড়াতে আবিষ্কৃত হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

মাশরুমে মজুত ভিটামিন বি৬ সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক। এর মধ্যে রয়েছে সেরোটোনিন, একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ, খিদে, ঘুম এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে ট্রিপটোফ্যান, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়। উদ্বেগ, স্ট্রেস এবং বিষণ্ণতার মতো মানসিক রোগের সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে মাশরুম নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। কারণ এর মধ্যে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট গুণ রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

চুল-ত্বকের জন্য ভালো

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে তামা রয়েছে। তামা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। মাশরুমের মতো তামা সমৃদ্ধ খাবার খেলে ত্বকে কোলাজেন তৈরি হয়, যা তারুণ্য, উজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়।

কীভাবে খাবেন

সালাদ হিসেবে মাশরুম বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া মাশরুম স্যুপ, ক্রিম মাশরুপ স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। সবজির সঙ্গে মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি করে খাওয়া যেতে পারে। নুডুলসের সঙ্গে মাশরুম মিশিয়ে খেতে পারেন, ফ্রাই করেও খেতে পারেন। মাশরুমের পাউডার তৈরি করে নেওয়া যায়, স্যুপে আস্ত মাশরুম ব্যবহার না করে পাউডার আকারে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

সতর্কতা ও কারা খাবেন না

কখনোই কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ করে মাশরুম খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ও হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাশরুম বিষাক্ত কি না সেটি নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে।

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, বিশেষ করে মাশরুম খাওয়ার কারণে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়, তাদের মাশরুম না খাওয়াই ভালো। মাশরুম যেহেতু ছত্রাকজনিত প্রোটিন তাই কিডনি রোগীরা এটি খাবেন না। যাদের হজমে সমস্যা হয়, পেটের নানা রকম সমস্যা থাকে, বার বার ডায়রিয়া হয় তাদের মাশরুম খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।

ওজন কমানোর সহজ উপায়
Prev Post ওজন কমানোর সহজ উপায়
জাম্বুরার উপকারিতা
Next Post জাম্বুরার উপকারিতা

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *