লাইফস্টাইল ডেস্ক :
মেছতার সমস্যায় নারী-পুরুষ উভয়ই ভোগেন। ত্বকের এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলো মেছতা। একবার ত্বকে মেছতার দাগ পড়লে, তার থেকে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে কালো দাগ। যা ত্বকের সৌন্দর্য পুরোটাই নষ্ট করে দেয়।
যাদের মুখে মেছতা আছে, তারা বিভিন্ন বাজারচলতি প্রসাধনী ব্যবহার করে ত্বকের আরও ক্ষতি করেন। এসব ব্যবহারে মেছতার দাগ হালকা হয় ঠিকই, কিন্তু কিছুদিন পর আবারও দাগ গাঢ় হতে থাকে। তাই ভরসা রাখুন ভেষজ উপাদানে। এতে সবয় লাগলেও এক সময দেখবেন মেছতার দাগ ধীরে ধীরে উঠে যাবে।
আগে জানে নিন মেছতা কি?
মেছতা চিনেন না বা আশেপাশের পরিচিত কেউ এই সমস্যায় ভুগছে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। মেছতা হলো ছোট ছ্টো বাদামি রঙের ছোপ ছোপ দাগ যা বেশিরভাগ সময় মুখের ত্বকে, হাতের বাহুতে, ঘাড়ে বা পিঠে দেখা যায়। আসলে শরীরের যে অংশগুলো সূর্য্যের আলোর সংস্পর্শে থাকে সেসব জায়গায় মেছতা দেখা যায়।
কেন হয়?
সুর্য্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শরীরে মেলানিন বাড়িয়ে দেয়। তাই বেশিক্ষণ রোদে থাকলে শরীরের কিছু কিছু অংশের ত্বকে মেলানিন বেড়ে যায় যার ফলে সেসব জায়গার রঙ গাঢ় হয়ে যায়। যা দেখতে বাদামি ছোপ ছোপ দাগের মতো মনে হয়। যাদের গায়ের রঙ ফর্সা, চুল একটু লালচে তাদের জেনেটিক্যালি মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মেছতার চিকিৎসায় পুরোপুরি ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু আপনি ঘরোয়া কিছু পরিচর্যার মাধ্যমে আপনার মেছতার দাগ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে পারেন। মুখের এই মেছতার দাগ যা দেখলেই আপনার মন ভেঙ্গে যায় তা দুর করার কিছু টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
টক দই
মেছতা দূর করতে অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো টক দইয়ের ব্যবহার। সামান্য টক দই ফেটিয়ে নিয়ে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর অপেক্ষা করুন ১৫-২০ মিনিট। সময় হলে ধুয়ে নিন। নিয়মিত টক দইয়ের ব্যবহারে মেছতা দূর হবে, বাড়বে ত্বকের উজ্জ্বলতাও।
লেবুর রস
লেবুর রস কখনোই সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। কোনোকিছুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সামান্য পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের মতো। লেবুর রসে থাকে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি সূর্যের আলোর ক্ষতিকর রশ্নির থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
আমন্ড অয়েল
আমন্ড অয়েলের অনেক উপকারিতা সম্পর্কে শুনেছেন নিশ্চয়ই? এটি আমাদের চুলের জন্য দারুণ কার্যকরী। শুধু চুলের ক্ষেত্রেই নয়, ত্বকের যত্নেও সমান উপকারী আমন্ড অয়েল। ২-৩ ফোঁটা আমন্ড অয়েল নিয়ে মেছতার স্থানে নিয়মিত ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে ঘণ্টাখানেক রেখে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত ব্যবহারে মেছতার দাগ দূর হবে।
হালকা গরম তেল
ত্বকে ব্যবহার উপযোগী যেকোনো তেল হালকা গরম করে মুখে ম্যাসাজ করুন। যতক্ষণ না ত্বক তেলটুকু শুষে নেয় ততক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর এভাবে রেখে দিতে হবে অন্তত ঘণ্টাখানেক। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। নিয়মিত এভাবে ব্যবহার করলে মেছতা দূর হবে।
সানস্ক্রিন
আমাদের মধ্যে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন না। কিন্তু সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে বাঁচাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। সেইসঙ্গে রোদের বের হলে সঙ্গে ছাতা, মাস্ক ও সানগ্লাস রাখবেন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার
১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও ১ চা চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মেছতার জায়গায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যদি আপনি শুধুমাত্র মেছতায় লাগান তাহলে এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি পুরো মুখে লাগান তাহলে একদিন পর পর ব্যবহার করবেন। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে থাকে ম্যালিক এসিড যা ডার্ক সেলকে এক্সফোলিয়েট করে ভিতর থেকে ফর্সা করে।
অ্যালোভেরা
ফ্রেশ অ্যালোভেরা নিয়ে মেছতার জায়গায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাসাজ করুন। এরপর ধুয়ে নিন। অ্যালোভেরা জেল আপনি চাইলে সারারাত ও রেখে দিতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল ডার্ক সেলের ডিপিগমেন্টেশন করে আর মেছতার দাগ কমায়।
টি ট্রি অয়েল
ত্বকের যত্নে টি ট্রি অয়েল খুব জনপ্রিয়। মেছতার দাগ কমাতেও আপনি এই টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ১-২ ফোঁটা অয়েল নিয়ে মুখে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে নিন। কয়েক ঘন্টা রেখে দিতে পারেন। আপনি চাইলে দিনে ১-২ বার এই এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
টি ট্রি অয়েলের হিলিং প্রোপার্টিজের কারণে এটি মেছতার দাগ কমায় সাথে ব্রণের সমস্যা দুর করে সুদিং অনুভূতি দেয়। যাদের ত্বক সেন্সিটিভ তারা টি ট্রি অয়েলের সাথে ২-৩ ফোঁটা অন্য কোন তেল যেমন অলিভ অয়েল বা জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।
টমেটোর রস
একটি ছোট টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ম্যাশ করে নিন। এবার ম্যাশড করা টমেটো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটিও আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বকের টাইরোসিনেজের এক্টিভিটি কমায় ও ত্বককে ফর্সা করে।