Search

রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ, এক সপ্তাহে ভর্তি ৭ হাজার ৬৩৫

  • 0
  • 2 views

গত ২৯ মে থেকে আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী। অন্যান্য সময় গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী থাকলেও সেদিন ৬৫৩ জন রোগী ভর্তি হয় ঢাকার এই হাসপাতালে। এর পরদিন রোগীর সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়ে যায়। ৩০ মে সারা দিনে ৯৬১ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটিতে।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ মে ১ হাজার ২০৮ জন, ১ জুন ১ হাজার ৩৩০ জন, ২ জুন ১ হাজার ২৭২ জন, ৩ জুন ১ হাজার ২২১ জন, ৪ জুন ১ হাজার ১১০ জন, ৫ জুন ১ হাজার ৩৫ জন, ৬ জুন ৯০২ জন, ৭ জুন ৭৬৫ জন এবং আজ ৮ জুন সকাল ৭টা পর্যন্ত ১১৭ জন ভর্তি হয়েছে এই হাসপাতালে। অর্থাৎ  সাত দিনে ৭ হাজার ৬৩৫ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে এই হাসপাতালে।

 

আইসিডিডিআর’বির চিকিৎসকরা জানান, এই মুহূর্তে যে ডায়রিয়ার প্রকোপ হচ্ছে, এটা গ্রীষ্মকালীন। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ডায়রিয়া রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। রোগী ও স্বজনের ভিড়ে হাসপাতালে লেগে আছে জটলা। অতিরিক্ত রোগী সামাল দিতে হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। প্রতিদিন রোগী যা আসছে, তার বেশির ভাগই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার।

 

তবে ঢাকায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ কেন বাড়লো, তা খতিয়ে দেখছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।

 

ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর’বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, এসব রোগীর একটি বড় অংশ তীব্র পানিশূন্যতা নিয়ে আসছে। যে কারণে আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে আমাদের হাসপাতালের বাইরেও সাময়িক তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।

 

আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, বছরের এই সময়ে দৈনিক গড়ে ৫০০ রোগী ভর্তি হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহে হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়েছে।

 

শুধু আইসিডিডিআর’বি হাসপাতাল নয়, রোগীর প্রকোপ বেড়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এমনিতে একটি তাপপ্রবাহ চলমান আছে। যে কারণে শিশুরা দ্রুত পানির পিপাসায় পড়ে, কারণ এ সময় প্রচুর ঘাম হয়। এতে পানি প্রচুর পান করতে হয়। তবে এ সময় লক্ষ করতে হবে পানি বিশুদ্ধ কি না। এ ছাড়া ঘরের খাবার ছাড়া বাইরের কোনও খাবার খাওয়া যাবে না। আর ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

এর আগে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, গরমের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগী বাড়ার আশঙ্কা আছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এই রোগ হয়। সাধারণত দিনে কারও তিন বা তার চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

 

তারা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শহরে টেপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা সুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে এসে দূষিত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার খাওয়া ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।

 

গরমের সময় ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ থেকে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

 

আইসিডিডিআর’বির চিকিৎসকরা আরও জানান, ডায়রিয়া থেকে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভ হয় না। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন আর ওষুধ খেলে ডায়রিয়া ধীরে ধীরে ভালো হয়।

 

ডায়রিয়া হলে যা করবেন

১. এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খাবেন। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সী) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানা শেষে এক গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) খাবার স্যালাইন খাবেন। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে, আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন।

 

২. শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে খাওয়ান, যেমন: ৩ বা ৪ মিনিট পরপর এক চা-চামচ করে স্যালাইন খেতে দিন। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি দুই বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে এবং কোনও অবস্থাতেই এটা বন্ধ করা যাবে না।

 

৩. ছয় মাসের বেশি বয়সী রোগী ওরস্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবে।

 

৪. রোগীকে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার, যেমন: ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ, ইত্যাদি খাওয়াবেন।

 

৫. রোগীকে কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর ও বেদানা খাওয়াবেন না।

 

৬. ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াবেন। তারপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে দ্রুত কাছের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

 

ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়

১. পানি ফোটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন এবং ঠান্ডা করে পান করুন। ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে।

২. রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার খাবেন না। খাবার খাওয়ার আগে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোবেন।

 

৩. পায়খানা করার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন।

 

৪. ফিডারে শিশুকে কিছুই খাওয়াবেন না। যদি খাওয়াতেই হয়, তবে ফোটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ফিডারটি ধুয়ে নেবেন। ফিডারের নিপলের ছিদ্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো
Prev Post এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো
সহজ পদ্ধতিতে আলু দিয়ে গরুর মাংস রান্না
Next Post সহজ পদ্ধতিতে আলু দিয়ে গরুর মাংস রান্না

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *