Search

শরীরের ওজন কমানোর নিয়ম

  • 0
  • 2 views

আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আমাদের শরীরের ওজন। আর এ থেকে মুক্তি পেতে কেউ ছুটছেন জিমে আবার কেউ বা করছেন ডায়েটিং। অনেকে ওজন বেড়ে গেলে বা ওজন বাড়ার ভয়ে হঠাৎ করে ডায়েটিং শুরু করেন। এক্ষেত্রে অবশ্য মেয়েরা অনেকখানি এগিয়ে। কিন্তু কোন কিছু না ভেবে ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ব্যতিত অথবা না বুঝে ডায়েট শুরু করলে কিংবা একেবারেই খাবার কমিয়ে দিলে ওজন তো কমেই না বরং শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাব দেখা দেয় যা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রধান অন্তরায়।

 

আমরা কেন মোটা হই বা আমাদের কেন ওজন বাড়ে, তা জানেন কি? আমাদের ওজন বাড়ার সাথে দেহের ক্যালোরির অনেক বড় সংযোগ রয়েছে। আমরা প্রতিদিন যতটা ক্যালরি গ্রহণ করি তা যদি দেহে শুধুই জমা হতে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা মোটা হবো। অর্থাৎ দেহের ওজনটা ঠিক রাখতে ক্যালরি ক্ষয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু ক্যালরি ক্ষয় নিয়েই সব ঝামেলা।

 

এক কথায় আমাদের তখনই ওজন বাড়ে যখন আমরা আমাদের প্রতিদিনের কাজে এবং ব্যায়ামে ব্যবহৃত ক্যালরির চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করি। অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই কম খাওয়া এবং বেশি কাজ করা উচিত। স্বাস্থ্যকর উপায়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থায়ীভাবে আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামে পরিবর্তন আনা। কিছু ছোট পরিবর্তন যেমন কম খাওয়া এবং ফ্যাট, চিনি ও অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পান থেকে বিরত থাকলে তা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। অনেকেই মোটা হবার ভয়ে একেবারেই খাবার কমিয়ে দেন। খাওয়া কমিয়ে দিলে ওজন কমে ঠিকই কিন্তু শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। তাই নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ এবং এমন খাদ্য নির্বাচন করা জরুরি যা খেলে ওজন বৃদ্ধি হবে না কিন্তু শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঠিকই পাবে।

 

পুষ্টিবিদদের মতে, এক মাসে তিন কেজি কমানো স্বাস্থ্যসম্মত। অর্থাৎ হাতে যদি পাঁচ মাস সময় থাকে, তবে আট-দশ কেজি কমানো হবে লক্ষ্য। প্রত্যেক মেয়ের শারীরিক গঠন আলাদা। বিয়ের কনেদের নজর থাকে পেট, উরু ও নিতম্বের মেদ কমানোর দিকে। তাই এমন ব্যায়াম বাছতে হবে, যাতে কম সময়ে বেশি ফল পাওয়া যায়।

 

ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিকভাবে ছ’-সাতটি ব্যায়াম বেছে নিতে হবে। স্কোয়াট, রোয়িং, হ্যামকার্ল, লঞ্জ। এই ব্যায়ামগুলো নিয়ম করে করলে অনেকটা ওজন ঝরানো সম্ভব হয়। পেটের অংশের মেদ কমানোর জন্য কোর এক্সারসাইজ যেমন প্ল্যাঙ্ক, সাইড প্ল্যাঙ্ক, ব্রিজ করা যেতে পারে। তবে কেবল শরীরচর্চা করলেই হবে না, ব্যায়ামের পাশাপাশি জীবনযাপন এবং খাওয়াদাওয়াতেও বদল আনতে হবে ।

 

আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত ওজন কমানোর জন্য সবার আগে খাবারের তালিকা থেকে চিনি বাদ দেওয়ার দরকার। চিনির পরিবর্তে গুড়ের ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যও সঠিক থাকে এবং ওজনও কমে।

 

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

মাসে সাত কেজি ওজন কমাতে হলে প্রথমেই আপনাকে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আপনার খাদ্যাভ্যাস যেন নিয়ম মেনে প্রতিদিন একই সময়ে হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। সকালবেলা ভারী নাশতা, দুপুরে ভাত আর রাতে রুটি বা হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাঝখানের সময়ে ফলমূল খেতে পারেন। এই খাদ্যাভ্যাস আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

 

সুষম খাবার গ্রহণ

ওজন কমানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন। চর্বি বা চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিন। বাইরের তেলে ভাজা খাবার খাদ্যতালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিতে হবে। ফাস্ট ফুড যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুইবেলার মধ্যবর্তী সময়ে খিদে পেলে পপকর্ন, ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন।

 

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে এর বেশি ঘুমালে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করুন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিয়ম মেনে রাতে জলদি ঘুমাতে যান ও ভোরবেলা উঠে পড়ুন।

 

অতিরিক্ত খাবার পরিহার করুন

আপনার জন্য যেটুকু খাবার প্রয়োজন, ঠিক ওই পরিমাণে খাবার খান। নিজের শরীরের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত খাবার খেলে আপনার ওজন বাড়বেই। তাই এক মাসে সাত কেজি বা তার বেশি ওজন কমাতে চাইলে অতিরিক্ত খাবার সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন।

 

পানি

অনেকেই বলে থাকেন খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পানি খেতে হবে, খাওয়ার ঠিক পূর্বে পানি খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু এটা একদমই একটা ভ্রান্ত ধারণা। বরং আপনি যদি একটু কম খেতে চান তাহলে খাওয়া শুরু করার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এতে আপনার পেট কিছুটা ভরবে এবং খাওয়ার সময় তুলনামূলকভাবে কিছুটা খাবার কম খাবেন। এছাড়াও সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন। পানি বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ যৌগ হিসেবে কাজ করে।

 

চিনি পরিহার করুন

কাঙ্ক্ষিত ওজন কমানোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে চিনি পুরোপুরি পরিহার করা আবশ্যক। কারণ, মাত্র ১ চা-চামচ চিনিতে ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে, যা আপনার ওজন কমানোর অন্তরায়। কেননা আমরা এই চিনির ক্যালরিই অতিরিক্ত গ্রহণ করে থাকি। তাই যারা চা ও দুধে অতিরিক্ত চিনি খান তারা চিনি পরিহার করুন অথবা পরিমাণ কমিয়ে দিন। যারা অতিরিক্ত খাবার হিসেবে কোমল পানীয়, মধ্য দুপুর বা বিকালের নাস্তায় সিংগাড়া, সামুচা বা অন্যকোন ডুবো তেলে ভাজা খাবার, রাতে বা দুপুরে খাবার পর মিষ্টি খাবার খেয়ে থাকেন তারা এখনই তা বাদ দেন। এ খাবার থেকে যে ক্যালরি পাওয়া যাবে তা আমাদের ওজন কমাতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

 

লেবু পানি

এই পানীয় যকৃতের বিষাক্ততা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ বিষাক্ততায় ভরপুর যকৃৎ কার্যকরভাবে চর্বির বিপাক করতে পারে না। তাই লেবু পানি বিষাক্ততা দূর করার এনজাইমের পরিমাণকে চমৎকারভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে যকৃৎ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া এটি দেহের বিপাক ক্রিয়াকেও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধ্যম আকৃতির একটি লেবু চিপে রস বের করে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন প্রতিদিন। এটি খাওয়ার পর ৩০ মিনিট কিছু খাবেন না।

 

আদা চা

আমরা অনেকেই জানি আদা হজমের জন্য ভালো। এ ছাড়া এটি হচ্ছে থার্মোজেনিক অর্থাৎ এটি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে কার্যকরভাবে দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

পেটের মেদ নানা কারণে হয়ে থাকে। যেমন : অতিরিক্ত খাওয়া, বয়সের কারণে, প্রয়োজনীয় হরমোনের উৎপাদন কমে গেলে, ব্যায়াম না করলে ইত্যাদি। আদা এসব সমস্যা প্রতিটিই সমাধান করতে পারে। তাই বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে, হজমশক্তি বাড়াতে এবং কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন কমাতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কাপ আদা চা খান।
চার কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে এক-দুই ইঞ্চি আদা খোসা ছাড়িয়ে স্লাইস করে সেই পানিতে দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট চুলায় রাখুন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হলে তাতে এক টেবিল চামচ লেবু ও এক টেবিল চামচ খাঁটি মধু ভালো করে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করুন।

 

হরমোনজনিত রোগ

থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ ‘হাইপারথাইরয়েডিজম’ হলে ওজন কমে একদম শুকিয়ে যায় মানুষ। এসব রোগীর খাবারে রুচি ভালো থাকে এবং তারা বেশি খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমতে থাকে। থাইরয়েড হরমোন বেশি থাকার কারণে রোগীর শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। খাদ্য বেশি বিপাক হয়ে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে। ওজন কমার পাশাপাশি ক্ষুধা বেশি লাগা, গরম অনুভূত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় হাইপারথাইরয়েডিজমে।

 

সকাল সকাল ব্যায়াম করা

ওজন কমাতে হলে যে ব্যায়াম করতে হবে এটা সবারই জানা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, দিনের নানা কাজের ব্যস্ততায় সেটা পেছাতে পেছাতে আর করা হয়ে ওঠে না। তাই সকাল সকাল ব্যায়ামটা সেরে ফেললে ভালো। যে কোন ধরনের ব্যায়াম করা যায়, যেমন দড়িলাফ, দ্রুত হাঁটা, দৌড়, উঠবস ও ভারোত্তোলন। যেটা সুবিধা হয় এবং ভালো লাগে এমন ব্যায়াম বেছে নিয়ে সকাল সকাল ব্যায়াম করে ফেলুন। দিনের শুরুতেই তখন একটি বড় কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন বলে মনে হবে। এই অনুপ্রেরণা সারাদিন মন ভালো রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতেও সাহায্য করবে। বিকেলে সময় পেলে আবার ব্যায়াম করতে পারবেন।

 

তবে শুধু একটা পয়েন্ট মেনে চললে, যেমন কোক খাওয়া থেকে বিরত থেকে আবার ২ প্লেট ভাত খেয়ে নিলে নিশ্চয়ই ওজন কমানো সম্ভব হবে না। ওজন কমানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই যা যা করণীয় – যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম – তার সাথে অ্যাকশন পয়েন্টগুলো থেকে একটা কাজ বেছে নিয়ে সেটার ওপর সেই দিন বেশি গুরুত্ব দিবেন।

সর্দি-কাশিতে মধুর উপকার
Prev Post সর্দি-কাশিতে মধুর উপকার
দ্রুত ওজন কমায় যেসব ভেষজ চা
Next Post দ্রুত ওজন কমায় যেসব ভেষজ চা

Leave a Comment:

Your email address will not be published. Required fields are marked *