নিজস্ব প্রতিবেদক :
সংসার, সন্তান প্রতিপালন, চাকরি আর নানা দায়িত্বের বেড়াজালে দম ফেলার ফুরসত নেই। কিন্তু এর মাঝেই বেঁচে থাকার রসদ আর অনুষঙ্গ বের করে নিতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে। নিজের যত্ন নিতে হবে। আপনি যখন নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট হবেন, কেবল তখনই আপনি অন্যের ভালো সঙ্গী হতে পারবেন। মানুষ নিজেই যখন নিজের যত্ন নেয়, নিজের সঙ্গ উপভোগ করে, তখন তার শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেম আরও সক্রিয় হয়। ফলে আপনি সারা দিনে যে খাবার গ্রহণ করেন, সেগুলো সহজেই এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। আর আপনার কর্মক্ষমতা বাড়ে।
শরীরের যত্ন বললেই আমরা ধরে নিই দামি কোনো প্রসাধনীর ব্যাপারস্যাপার। আসলেই কি তা-ই? বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাতের কাছের অনেক উপকরণই হয়ে উঠতে পারে শরীরের যত্ন নেওয়ার দারুণ প্রসাধন।
গবেষণায় দেখা গেছে, আজীবন সুস্বাস্থ্যের গোপণ চাবিকাঠি হল ‘লাইফস্টাইল মেডিসিন’। যা খুবই সহজ। কেবলমাত্র আপনার ডায়েটে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সেই সঙ্গে কীভাবে নিজেকে স্ট্রেস ফ্রি রাখতে পারবেন সেটা শিখুন।
মুখের ত্বক ঝলমলে রাখতে লবণ-পানি
সামান্য পরিমাণ খাবার লবণ পানিতে গুলিয়ে নিন। তারপর সেই পানিতে ভিজিয়ে নিন একটা তোয়ালে। ভেজা তোয়ালেটি দিয়ে মুছে ফেলুন মুখ। দেখবেন, মুখের ত্বকে আসবে তারুণ্যের ঝিলিক। লবণ-পানির এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ মুছতে পারেন অফিস বা কাজের ফাঁকেও।
ঠোঁট সুন্দর রাখতে তেল
শীতের এই সময়টায় ঠোঁট ফাটে অনেকেরই। এর জন্য লিপজেল তো আছেই। তবে অনেকেরই লিপজেলে অ্যালার্জিও আছে। এ ক্ষেত্রে আমন্ড বা পিচ অয়েল বেশ কেজো। একটা পরিষ্কার টুথব্রাশে তেল মেখে ঠোঁটের ওপর ঘষুন। ঠোঁট ফাটা রোধ হবে এবং দেখতেও হবে আকর্ষণীয়।
আর্দ্র ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল
ত্বক শুষ্ক হলে কারই বা ভালো লাগে। বিশেষ করে ত্বক আর্দ্রতা হারায় শীতের এই মৌসুমে। সমাধান আছে অলিভ অয়েলে। প্রথমে মুখের ওপর স্টিম নিয়ে অলিভ অয়েল মাখুন মিনিট সাতেকের মতো। ত্বক হবে পরিষ্কার, মসৃণ ও উজ্জ্বল। ভালো ফল পেতে চাইলে চার-পাঁচ দিন পর পর মুখে অলিভ অয়েল মাখুন।
ব্রণের দাগ দূর করতে মধু
পরদিনই একটা মিটিং কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠান, ঠিক সেদিন মুখে উঠে গেল একটা ব্রণ! এ যেন বিরাট এক আতঙ্ক। ব্রণের ওপর মধু মেখে ঘড়ি দেখুন। ১৫ মিনিট পর মধু তুলে ফেলুন হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে। ব্রণের ব্যথা এবং দাগ—দুটিই অনেকাংশে কমে আসবে। আর মেকআপ নিলে ব্রণের দাগও ঢেকে ফেলা যাবে ভালোভাবেই।
ব্রণের আরেক ওষুধ আই ড্রপস
ব্রণের দাগ ও ব্যথা দূর করতে আরেকটা ওষুধ বেশ কাজে দেয়। সেটা হলো আই ড্রপস। চোখ লাল হলে অনেকেই আই ড্রপস ব্যবহার করেন। সেই আই ড্রপস দিয়ে একটা কটন প্যাড ভিজিয়ে নিন। তারপর সেটা ফ্রিজে রেখে দিন তিন থেকে পাঁচ মিনিট। ফ্রিজ থেকে বের করে কটন প্যাডটি দিয়ে ব্রণের ওপর হালকা করে ঘষুন; দাগ ও ব্যথা—দুটিই দূর হবে।
মেকআপ তুলতে পানি ও অলিভ অয়েল
মেকআপ তুলতে কত আয়োজন! কিন্তু সামান্য পানি আর অলিভ অয়েল হতে পারে দারুণ উপাদান। একটি ছোট বোতলে পানি ও অলিভ অয়েল ৩: ১ অনুপাতে মিশিয়ে নিন। তারপর সেটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখ। মেকআপ তো উঠবেই, মুখটাও হবে দারুণ পরিষ্কার।
বেকিং সোডা দিয়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা পোহাতে হয় অনেককেই। এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা নিন। ভালো করে সেটা গুলিয়ে নিন এক গ্লাস গরম পানিতে। একটা কটন প্যাড ভিজিয়ে নিন মিশ্রণটি দিয়ে। তারপর সেটা ঘষুন চোখের চারপাশে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। চোখের চারপাশ ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম মাখুন ওই অংশে। এভাবে প্রতিদিন চালাতে থাকলে দূর হবে চোখের চারপাশের কালো দাগ।
সঠিক খাবার খান
সারাদিনে অন্তত পাঁচটি সবজি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। সেগুলি আপনি আপনার পছন্দমতো, কাঁচা, সেদ্ধ বা ভাজা করে খেতে পারেন। ডায়েটে শাকসবজির পরিমাণ বেশি হলে তা ফুসফুস, কোলন, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সঠিক খাবার আপনার ওজন ঠিক রাখবে, লক্ষ্যে স্থির রাখবে এবং লালসা এড়াতে সাহায্য করবে। আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন ঠান্ডা পানীয়, ক্যান্ডি, চিপসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় না, বরং শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি পৌঁছে দেয়। চা এবং কপির আকারে আপনি কতটা ক্যাফাইন গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন দু’কাপের বেশি খেলে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যার ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি খান
শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। পানি ডিটক্সিফাই করে, হজমে সাহায্য করে, কেমোথেরাপির ফলাফলে সাহায্য করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশীকে শক্তি জোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি কাজ করার সময় ডেস্কের পাশে এবং ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানার পাশে পানির বোতল অবশ্যই রাখুন। এটি আপনাকে আরও জল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে। আপনি আপনার ডায়েটে ডাবের পানি এবং তাজা ফলের রসও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।