নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য আমাদের খাওয়াদাওয়ার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। শরীর সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রাখা জরুরি। চাইলেই যখন-তখন এটা-সেটা খাওয়া যায় না। বিশেষ করে খালি পেটে কিছু খাবার আগে চিন্তা করা উচিত। খালি পেটে খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে মাথা ঘামান না কেউই। তবে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা দিনের শুরুতে যদি খাওয়া হয় তাহলে শরীরে সৃষ্টি হতে পারে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা।
সকালের নাশতায় মসলাদার খাবার খেলে শরীরে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে পাকস্থলীর ক্ষতি হয়। তাই সকালের নাশতায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরমর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
চা-কফি : সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম গরম চা হলে শরীরটা বেশ সতেজ হয়ে যায়। হলে কী হবে, খালি পেটে চা-কফি খাওয়ার রয়েছে ক্ষতিকর দিক। ডাক্তারদের মতে, খালি পেটে চা-কফি খেলে অম্বল হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি থাকে। মাথা ঘোরার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই দিনের শুরুতে চা-কফি খেতে নিষেধ করেন তারা।
লেবু জাতীয় ফল : লেবু জাতীয় ফল যেমন মাল্টা, কমলা, জাম্বুরা ইত্যাদি খালি পেটে খাওয়া বারণ। এসব ফলে যথেষ্ট ফাইবার থাকে। সেটা হজম করতে গিয়ে পাকস্থলীর ওপরে যথেষ্ট চাপ পড়ে। তাই পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে এ ধরনের ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না।
কাঁচা সবজি : আঁশে ভরপুর থাকে কাঁচা সবজি যা হজম হতে দেরি হয়। খালি পেটে খেলে আঁশ হজম হতে দেরি হওয়ার কারণে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করবে। পেট ব্যথারও কারণ হতে পারে। তাই খালি পেটে সালাদ খাওয়া যাবে না।
বেকারির খাবার: পেস্ট্রি, কেক, পিৎজা- এই ধরনের খাবার খেতে মজা লাগলেও, পেট খালি অবস্থায় এসব খাবার পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাথে তৈরি করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। তাই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর এসব খাবার এড়াতে হবে।
ঝাল খাবার: পাকস্থলীর আস্তরণে সমস্যা তৈরি করে। পেট খালি হতেও ঝামলা বাধায়। খালি পেটে ঝাল, ভাজা পোড়া খাবার খাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না। মরিচ পাকস্থলীর অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে পেটব্যথা তৈরি করতে পারে।
চকলেট: খালি পেটে যে কোনো চিনিযুক্ত বা মিষ্টি খাবারের ক্ষেত্রে ‘লাল পতাকা’ দেখাতে হবে। প্রক্রিয়াজাত চিনি ও চিনি দিয়ে তৈরি খাবার ও পানীয় মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।
কলা: অনেকেই খালি পেটে কলা খাওয়া উপকারী মনে করেন। তবে ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর এই ফল দ্রুত হজম হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বাড়ার পাশাপাশি হৃদস্বাস্থ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে কলা এড়াতে হবে।
টমেটো: এতে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড হজম রসের সঙ্গে মিলে পাকস্থলীতে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। তাই খালি পেটে খাওয়া উচিত না।
শসা: অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে পাকস্থলীতে হজম করার মতো পর্যাপ্ত রস উৎপন্ন হতে সময় নেয়। যে কারণে শসা হজম করা শক্ত হয়ে যায়। ফলাফল গ্যাস ও পেট ব্যথা। তাই দুই খাবারের মাঝে নাস্তা হিসেবে শসা ভালো।
দুগ্ধজাত খাবার: দই, দুধ বা দুধের তৈরি খাবারে ল্যাক্টিক অ্যাসিড থাকে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর, দুধের তৈরি খাবার খেলে, সেথায় থাকা ল্যাক্টিক অ্যাসিডের ব্যাক্টেরিয়া পাকস্থলীর অ্যাসিডের সংস্পর্শ্ এেসে মরে যায়। ফলে দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যা।
কোমল পানীয়: কার্বোনেইটেড কোমল বা সোডা পানীয় সাধারণভাবেই শরীরের জন্য খারাপ। আর খালি পেটে পান করলে দেখা দিতে পারে পেটে অস্বস্তি। সেই সাথে রক্ত চলাচলে সমস্যা তৈরি, রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধিও করে। আর দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর অন্যান্য খাবারে সঙ্গে এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করলে হজমেও সমস্যা তৈরি হয়।
আচার ও দই জাতীয় খাবার: গাঁজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন খাবার দই ও আচার খালি পেটে এসব খাবার খেলে শরীরের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাছাড়া দইয়ে বিদ্যমান ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে শরীরে অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
মসলাদার খাবার: খালি পেটে মসলা জাতীয় খাবার খেলে অ্যাসিডিটিক বিক্রিয়ার কারণে পেটে জ্বালাপোড়া হয়। আর নিয়মিতভাবে মসলা জাতীয় খাবার বেশি খেলে পাকস্থলীতে বিভিন্ন রোগ হয়।