শীতের শুরুতে সর্দি-কাশি খুব সাধারণ রোগ। শীতের সময়ে এই রোগে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে এই রোগে ওষুধ খাওয়ার কোনো দরকার নেই। ঘরোয়া উপায়ে এ রোগ ভালো হয়। সর্দি-কাশি হলে খেয়ে দেখতে পারেন মধু। মধু উচ্চ ওষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। এতে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। নিয়ম মেনে মধু খেলে খুব সহজে সর্দি-কাশি ভালো হয়। মধু কাশি কমাতে সাহায্য করে। যষ্টিমধু ভেতর থেকে কফ বের করার পাশাপাশি গলাকে পরিষ্কার করে।
সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় মধু মহৌষধির মতো। কারণ, এতে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী কিছু উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের প্রতিরোধ করতে পারে। এ কারণে যুগের পর যুগ ধরে ঠান্ডা লাগার সমস্যায় মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। এমনকী এই ভেষজ উপাদানের গুণেই একাধিক মানুষ অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্য ছাড়াই সুস্থ হচ্ছেন। তবে জানেন কি, ঠিক কী ভাবে মধু খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে?
গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খান :
ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার ইচ্ছে থাকলে এক গ্লাস পানি ফুটিয়ে নিন। তারপর পানি ঠান্ডা হয়ে এলে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে। এতে উপকার মিলবে। সর্দি, কাশির প্রকোপও কমবে। এমনকী বুকে জমে থাকা কফ বেরিয়ে যেতেও সময় লাগবে না। তাই এই সমস্যায় পড়লে এভাবে মধু খান।
সর্দি-কাশির সমস্যা সারাতে মধুর ব্যবহার বেশ পুরনো। তবে সঠিক উপায়ে না খেলে কাঙ্ক্ষিত উপকার মিলবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক সর্দি-কাশি সারাতে মধু খাওয়ার সঠিক উপায়-
চায়ের সঙ্গে মধু:
এক কাপ চায়ে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। ব্যস, তাহলেই সর্দি, কাশি নিপাত যাবে। কারণ মধুর পাশাপাশি চা এবং লেবুরও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এফেক্ট রয়েছে যা কিনা এইসব সমস্যা কমানোর কাজে দ্রুত মতো কাজ করে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার ইচ্ছে থাকলে এই পানীয়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলবেন না যেন।
তুলসীর সঙ্গে মধু:
সকালবেলায় কয়েকটি টাটকা তুলসী পাতা এক চামচ মধুতে মিশিয়ে টুক করে গিলে নিতে পারেন। কিংবা তুলসী পাতার রস করে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে গলায় ঢালুন। তাতেই কিন্তু খেলা ঘুরে যাবে। সর্দি, কাশির মতো সমস্যা আর পিছু নিতে পারবে না। এমনকী বাড়বে আপনার ইমিউনিটিও। তাই বিপদে পড়লে এই টোটকার কথা ভুলবেন না যেন!
মধু ও আদা:
একটা ছোট আদা কুচি কুচি করে কেটে নিন। তারপর সেই টুকরোগুলি এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চুষে চুষে খান। কিংবা এই মিশ্রণ জল দিয়ে গিলে খেয়ে নিতে পারেন। হলফ করে বলতে পারি, তাতেই কমবে কাশির প্রকোপ। উঠে আসবে বুকে জমে থাকা কফ। তাই এবার থেকে কাশির খপ্পরে পড়লে কাফ সিরাপ না খেয়ে এই টোটকার শরণাপন্ন হন। এই কাজটা করলে আপনার সুস্থ থাকার পথে আর কোনও বাধা থাকবে না।
মধু ও লেবু:
আপনার চায়ের সঙ্গে মেশান মধু। এরপর তাতে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। এবার সেই চা পান করে নিন। এতেই আপনার সর্দি-কাশির সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে। কারণ চা এবং লেবুরও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এফেক্ট রয়েছে যা এ ধরনের সমস্যা কমানোর কাজে সাহায্য করে।
সকালে এক চামচ মধু খান:
হাতের কাছে অন্য কোনও ভেষজ না থাকলে শুধু মধুই খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে রোজ সকালে উঠে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। এতে কমবে সর্দি-কাশির প্রকোপ। এমনকী ইমিউনিটিও বাড়বে। তাহলে একাধিক সংক্রামক রোগব্যাধির ফাঁদে পড়তে হবে না।
মধু বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এক বছরের কম বয়সী শিশু বা এলার্জির সমস্যা আছে এমন ব্যক্তি ছাড়া বেশিরভাগ মানুষের ব্যবহারের জন্য এটি নিরাপদ। মধু প্রায়শই ব্যবহৃত একটি সাধারণ প্রতিকার যা রোগীদের জন্য সুপরিচিত। এটি সস্তা, কেনা সহজ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলতে গেলে। ক্লিনিশিয়ানরা যখন ইউআরটিআইয়ের জন্য প্রেসক্রিপশন করতে চান, আমরা মধুকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসাবে প্রস্তাব দেব। এটি সর্দি-কাশির সাধারণ ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর এবং কম ক্ষতিকারক।
এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেয়া উচিত নয়, কারণ এটি একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে ঝুঁকির কারণে যেকোনো শিশুর অন্ত্রের মধ্যে টক্সিন তৈরি করতে পারে, যার ফলে সম্ভাব্য মারাত্মক ইনফ্যান্ট বোটুলিজম হতে পারে।